পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট অব্যাহত, যান চলাচল বন্ধ হবার উপক্রম

ঢাকা, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 15:42:56

তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে সোমবার (২ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনেও রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

রোববার ( ১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির ডাকে ২৬ জেলায় চলছে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতি চলছে।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেল, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক শ্রমিকরা। জ্বালানি তেল না পেয়ে অনেককে পাম্প থেকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। তেলের অভাবে অনেক জায়াগায় বন্ধ হয়ে গেছে বাস-ট্রাক চলাচল।

তেলের অভাবে অনেক জায়াগায় বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক অমীমাংসিত দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাল বাহানা করছেন। বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। এগুলো মেনে নিয়ে জ্বালানি ব্যবসা করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলায় চলছে না ট্যাংকলরির চাকা। একই সঙ্গে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। অনেক গাড়িই জ্বালানি তেলের অভাবে স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি।

ধর্মঘটের বিষয়ে সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও তিনটি তেল ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাম্প মালিকদের সংগঠন পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম কাবুল। ওই সভার ওপরই ধর্মঘটের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীসহ বিভাগের ১০ জেলায় ২৯৮টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এ সব পেট্রোল পাম্পে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড় গণপরিবহন চলাচল করে। ট্যাংকলরি ধর্মঘটের কারণে গণপরিবহনগুলোতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।

পাম্প বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

তেল পরিবশেকদের সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ নিয়ে কর্তৃপক্ষ তালবাহানা করছে। বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ফিলিং স্টেশন তথা জ্বালানি ব্যবসায়ীদের ওপর অযথা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দফতর থেকে বিভিন্ন ধরণের বিধান। যা মেনে নিয়ে জ্বালানি ব্যবসা করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে শ্রমিকরা খুলনার খালিশপুরস্থ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল ডিপোর তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করছেন। ধর্মঘটের ফলে অতিরিক্ত ট্রাক-লরির চাপে ফিলিং স্টেশন, ট্রাক-লরি স্ট্যান্ডে জায়গা না হওয়ায় ট্রাক-লরিগুলোকে সড়ক-মহাসড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আন্দোলনকারীরা বলছেন দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

তেল পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, কর্মবিরতির কারণে খুলনার পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলায় চলছে না ট্যাংকলরির চাকা। একইসঙ্গে পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৫টি দাবিতে আমরা ধর্মঘট পালন করছি। এসব দাবি মানতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।

পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগেও ধর্মঘট পালন করছেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

রোববার ( ১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে চলছে ধর্মঘট।

পাম্প বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যানবাহনের চালকরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীদের অনেককে রাজশাহী নগরীর পাম্পগুলোতে এসে তেলের জন্য ধরনা দিতে দেখা যায়। তবে পাম্প শ্রমিকরা তাদের দাবি সম্বলিত পোস্টার ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি তেল কিনতে আসা চালকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন।

নগরীর কাজলা এলাকার মেসার্স ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মুরাদ হোসেন জানান, সোমবার ( ২ ডিসেম্বর) ভোর থেকে অনেকে পাম্পে তেল নিতে এলেও তারা তেল বিক্রি করছেন না। ডিপো থেকে ডিলাররা জ্বালানি তেল তুলছেন না। আবার ট্যাংকলরির মালিক-শ্রমিকরা তেল পরিবহনও করছেন না।

ধর্মঘটের কারণে যানবাহনে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।

নগরীর কুমারপাড়া এলাকার গুল গফুর ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আবদুর রহিম বলেন, ‘দাবি মেনে না নিলে আমরা তেল বিক্রি করব না। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, তবে আমাদের দিকেও সরকারের তাকানো উচিত।’

একই দাবিতে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় জ্বালানি তেল পেট্রোল পাম্প মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। এই বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ উপজেলার ৩২টি পাম্পের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

মালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- ‘জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে সাত শতাংশ প্রদান, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট না-কি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণ, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা প্রণয়ন, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ পেট্রোল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতিত অন্য দফতর বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই কর্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দফতর ব্যতিত সরকারি অন্য দাফতরিক প্রতিষ্ঠান, ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর