করোনা মোকাবিলায় সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ভারত

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 22:32:36

আন্তর্জাতিক বাজারে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ) ও ক্লোরোকুইনের (সিকিউ) সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত। সারাবিশ্বে হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন ওষুধ রফতানিতে বড় বাজার ভারতের দখলে বলা চলে।

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর ইবোলা, ম্যালেরিয়া, এইডস রোগের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা দাবি করছেন, হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন বা ক্লোরোকুইন ওষুধে করোনা রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ভারত। ভুটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, মরিশাসসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে উপহার হিসেবে ক্লোরোকুইন ওষুধ পাঠাচ্ছে ভারত।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে ৩৫ লাখ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ) ওষুধ কেনার প্রস্তাব দেয়। মোদি সেই প্রস্তাবে সাড়া দিলে ট্রাম্প বড় গলায় মোদির প্রশংসা করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি অন্যান্য দেশগুলো, যেমন: কানাডা, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানও হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন ওষুধের পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি ভারত এসব দেশে হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন ওষুধ সরবরাহ করতেও প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাবিশ্ব এখন করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য উন্মাদপ্রায়। এমনকি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ও ভিটামিন জাতীয় ওষুধের কাঁচামাল সরবরাহ করতেও শুরু করেছে এসব দেশ। এতে ভারত থেকে এসব ওষুধের কাঁচামাল সরবরাহের জন্যও চেষ্টা করছে দেশগুলো। ভবিষ্যতে এসব ওষুধের কাঁচামালের বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে ভারত— এ বিবেচনায় গত ৩ মার্চ ২৬ প্রকার ওষুধ ও কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত এসব ওষুধ মজুদ না রেখে যেন আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে। এরপরই ভারত এ নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে তুলে নেয়। একইসঙ্গে ক্লোরোকুইন ও অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ আমদানি করার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না বলেও জানানো হয়।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ব্রাজিল, বাহরাইন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সই করেছে।

ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইক্যুইটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারত গত বছর প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ওষুধ রফতানি করেছিল। যা ভলিউম অনুসারে বিশ্বের জেনারিক রফতানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। ভারত বার্ষিক প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের ম্যালেরিয়ার ওষুধ রফতানি করতে সক্ষম।

যদিও বিশেষজ্ঞরা ক্লোরোকুইনে করোনা বিস্তার ঠেকানো সম্ভব— এমন দাবি নাকচ করে বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা যে ক্লোরোকুইন ওষুধে সুস্থ হচ্ছে এমন প্রমাণ নেই। প্রমাণ ছাড়া এ দাবি করা অযৌক্তিক। এমনকি রোগীর শরীরে ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রয়োগের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেন ওষুধটি রোগীর শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখাতে পারে, বলে সতর্ক করেন গবেষকরা। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ঠেকাতে প্রয়োজন ভ্যাকসিন, যা কিনা করোনার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। তবে এর জন্য প্রয়োজন এক থেকে দুই বছর সময়।

তবে বিজ্ঞানী কিংবা গবেষকদের এসব বিশ্লেষণ উড়িয়ে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্লোরোকুইন প্রয়োগ করতে চাপ দিচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে এ ওষুধের ব্যবহার করার নির্দেশনা দিতেও বাধ্য করেছেন বলে সেসব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন- ক্লোরোকুইন ওষুধে কি করোনা নিরাময় সম্ভব?

গরমে কমবে করোনার সংক্রমণ, দাবি মার্কিন গবেষকদের

করোনার চিকিৎসায় চার ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বন্যপ্রাণীর অবাধ বাণিজ্য, ভয়াবহ মহামারির দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

নীল আকাশ বলে দিচ্ছে, ভারত কতটা দূষণমুক্ত

পৃথিবীর যেসব অঞ্চল এখনো করোনামুক্ত

ক্ষমতার অন্দরমহলে করোনার আধিপত্য!

বাতাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্ভব?

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর