মসজিদ ভাঙা স্থগিত হলেও চীনে মুসলিম নিপীড়নে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চীনের উত্তরাঞ্চলে স্থানীয় মুসলিমদের বিক্ষোভের মুখে একটি মসজিদ ভাঙা আপাতত স্থগিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যথাযথ নিয়ম মেনে মসজিদটি তৈরি হয়নি দাবি করে নিনঝিয়া প্রদেশের উয়েইঝু গ্রান্ড মসজিদ ভাঙার নোটিশ দিলে স্থানীয়রা বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় মসজিদ ভাঙার কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
অন্য আরেক ভিডিওতে শুক্রবার রাতে চীনা পতাকা হাতে মসজিদের সিড়ি ও কম্পাউন্ড এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের বসে থাকতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানাতে খাবার সঙ্গে নিয়ে চীনের অন্যান্য মুসলিম অঞ্চল থেকে কয়েকশ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উয়েইঝু এলাকায় সমবেত হয়। কিন্তু ওই এলাকায় বাইরের কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না চীনের নিরাপত্তা কর্মীরা। এমনকি ওই এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক।
স্থানীয় মুসলিমদের দাবী, ‘সরকার মসজিদ ভবনটিকে অবৈধ বলছে, কিন্তু সেটা ঠিক না। মসজিদটির কয়েক শত বছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’
এদিকে শনিবার দুপুরে স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে একটি সরকারি আদেশ পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, সরকার মসজিদটি আপাতত ভেঙে ফেলা থেকে বিরত থাকবে। তার পরও বিক্ষোভাকারীরা জায়গা ছাড়েনি।
অপরদিকে, জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার প্যানেল বলছে, তারা এমন অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয়- চীন ১০ লাখ উইঘুর উপজাতিকে নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতে রেখেছে।
মূলত চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ জিনজিয়াংয়েই বেশিরভাগ উইঘুর ও সংখ্যালঘু মুসলিমের অবস্থান। সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ ভাগই উইঘুর মুসলিম। তিব্বতের মতো জিনজিয়াং প্রদেশও আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের ভেতর অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন করে আসছে পুলিশ। রমজানের রোজা না রাখার পাশাপাশি শহরে মুসলিম প্রথা অনুযায়ী শিশুদের নাম রাখতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।
ডকুমেন্টিং এগেইনিস্ট মুসলিম (ডিওএম) নামক একটি সংগঠন এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছে।
চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমানের বাস। তারা নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানায়, চীনে মুসলিমদের ওপর সরকারি বৈরি আচরণের ঘটনা বাড়ছে।
চীন সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে ‘অস্বাভাবিক’ লম্বা দাড়ি না রাখার ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করে।