মানসিক শক্তি লাভে সাত আমল

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআন তেলাওয়াত মানসিক শক্তি বাড়ায়, ছবি: সংগৃহীত

কোরআন তেলাওয়াত মানসিক শক্তি বাড়ায়, ছবি: সংগৃহীত

মানসিক শক্তি বলতে সাধারণত মানুষের আত্মিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে বোঝায়, যা একজন ব্যক্তিকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, আত্মা পবিত্র করা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটাকে রুহানি শক্তিও বলা হয়।

মানবজীবনে এ শক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। রুহানি শক্তি একজন মানুষকে সঠিক পথে চলতে, পাপ থেকে দূরে থাকতে এবং সৎ কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

বিজ্ঞাপন

কোরআন-হাদিসের আলোকে মানসিক শক্তি লাভের সাতটি আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-

পাক-পবিত্র থাকা
পবিত্রতা রুহানি উন্নতির মূল। নিয়মিত অজু ও গোসলের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র রাখা। পবিত্রতা ছাড়া ঈমানের আর যত শাখা-প্রশাখা আছে, যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকর, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি, তা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে। আর তাহারাত (শারীরিক পবিত্রতা) দ্বারা পবিত্র হয় মানুষের দেহ।

বিজ্ঞাপন

দেহ ও আত্মার সমষ্টি হলো মানুষ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের অর্ধাংশ পবিত্র হয় তাহারাত দ্বারা, আর বাকি অর্ধেক অন্যান্য ইবাদত দ্বারা। এ জন্য নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক অংশ।’ -সহিহ মুসলিম : ২২৩

আল্লাহর জিকির
দয়াময় আল্লাহতায়ালার স্মরণ মানসিক প্রশান্তি ও শক্তি প্রদান করে। নীরবে-নিভৃতে আল্লাহতায়ালা মানুষের মানসিক শক্তি জোগাতে সহায়তা করেন। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখো, কেবল আল্লাহর জিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ -সুরা রাদ : ২৮

সাহাবি হজরত আবু মুসা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে, আর যে ব্যক্তি জিকির করে না, তাদের দুজনের দৃষ্টান্ত হলো- জীবিত ও মৃতের মতো।’ -সহিহ বোখারি : ৬৪০৭

কোরআন তেলাওয়াত এবং তা নিয়ে ভাবা
কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত এবং তার অর্থ অনুধাবন মানসিক শক্তি বাড়ায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি এই কোরআনে মুমিনদের জন্য শেফা (আরোগ্য) এবং রহমত নাজিল করেছি।’ -সুরা আল ইসরা : ৮২

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৭

যথাসময়ে নামাজ আদায়
নামাজ মানসিক অস্থিরতা দূর করে এবং আত্মবিশ্বাস জোগায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ -সুরা বাকারা : ৪৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চেয়েছেন। বিশেষত রাত জেগে নামাজ আদায় করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই রাত্রিকালের জাগরণ এমন, যা কঠিনভাবে প্রবৃত্তি দলন করে এবং যা কথা বলার পক্ষে উত্তম।’ -সুরা মুজ্জাম্মিল : ৬

অর্থাৎ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের অভ্যাস নিজ প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে সহজ হয়। রাতের শান্ত পরিবেশ, চারদিকে নীরবতার সময়ে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং তাতে পূর্ণমাত্রায় মনোযোগও দেওয়া যায়।

দুনিয়ার চিন্তা কমিয়ে আখেরাতের প্রতি মনোযোগ দেওয়া
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেলা ও মজা, কিন্তু আখেরাতের আবাসই হলো চিরস্থায়ী।’ -সুরা আনকাবুত : ৬৪

আখেরাতের প্রতি মনোযোগ দিলে দুনিয়ার পরীক্ষাগুলোকে সাময়িক মনে হয় এবং এই চিন্তা মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

পাপ থেকে দূরে থাকা
পাপ মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং আত্মাকে দুর্বল করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জন্য সংকীর্ণ জীবন নির্ধারিত।’ -সুরা ত্বহা : ১২৪

সৎ লোকদের সাহচর্য
ভালো সঙ্গ মানসিক শক্তি বাড়ায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের ওপর চলে, তাই তুমি কাদের সঙ্গে মিশছো তা দেখে নাও।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৭৮