নীরবতা পালনে মৃতের কোনো উপকার হয় না
কোনো কোনো মহলে প্রচলন রয়েছে, বিশেষ কেউ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পর বা পরবর্তীতে বিশেষ কোনো উপলক্ষে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্যরা এসে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করে এবং ফুলের মালা, ফুলের তোড়া কবরে দেয়। আবার মৃত ব্যক্তির স্মরণেও বিভিন্ন মিটিং, সভা ইত্যাদির শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে দেখা যায়।
মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা, মৃত ব্যক্তির কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করাকে ইসলামি শরিয়ত সমর্থন করে না। সুতরাং মুসলমানদের দায়িত্ব হলো, এসব অহেতুক মনগড়া কাজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।
এখানে উল্লেখ্য যে, কোনো মুসলমান ইন্তেকাল করার পর তার কবরের কাছে গিয়ে জীবিতদের কী করতে হবে তা ইসলামে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে।
হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ি থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মৃতের দাফনের কাজ শেষ করার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল কী ছিল সে ব্যাপারে হজরত উসমান (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতের দাফন কাজ শেষ সম্পন্ন করতেন তখন কিছু সময় সেখানে অবস্থান করতেন এবং সঙ্গীদের বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং অবিচল থাকার দোয়া করো। তাকে তো এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩
তাবেয়ি আলা ইবনে লাজলাজ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার সন্তানদেরকে বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর যখন তোমরা আমাকে কবর দেবে তখন তোমরা আমাকে লাহদ (বোগলি) কবরে রেখ এবং বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ বলে সুন্দরভাবে মাটি দিয়ে দিও। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করো। কারণ আমি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কে এটা পছন্দ করতে দেখেছি। -তারিখে ইবনে মঈন: ২/৩৭৯-৩৮০
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবি হজরত বুরায়দা (রা.) বলেন, যখন তারা কবর (জিয়ারতের জন্য) যেতেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিখিয়ে দিতেন। তখন তারা এভাবে বলতেন- ‘আস সালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মু’মিনিনা ওয়াল মুসলিমিন। ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু লাহিকুনা আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়া।’
অর্থ: হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য ‘আফিয়ত’ (সব রকমের বিপদ-আপদ এবং অনাকাঙ্খিত ও অবাঞ্ছিত বিষয় থেকে নিরাপত্তা)-এর প্রার্থনা করি। -সহিহ মুসলিম: ৯৭৫
দাফন কাজ শেষ করার পর এবং অন্যান্য সময় কবর জিয়ারত করার নিয়মাবলী সম্পর্কে এ ধরণের আরও বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত এ সব আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তি যেমন উপকৃত হবে তদ্রূপ যারা মৃতের জন্য আমল করবে তারাও ফায়েদা পাবে।
অতএব মুসলমানের কর্তব্য কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রেও ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ অনুযায়ী আমল করা, হাদিস ও সুন্নাহর অনুসরণ করা এবং অমুসলিমদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করা।
কবর জিয়ারতের সুন্নত তরিকা হলো- কবরের কাছে গিয়ে সালাম দেওয়। এরপর কবরকে পেছনে রেখে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের জন্য এবং কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা।
এ ছাড়া কোরআনে কারিম থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করে কবরবাসীর জন্য ইসালে সওয়াব করা যেতে পারে। এর বাইরে কোনো কিছু করা ইসলাম সমর্থন করে না। এর দ্বারা কবরবাসী কোনো ধরনের উপকার পায় না।