কোরআনে বর্ণিত ঘটনা অবলম্বনে নাটক-সিনেমা বানানো নাজায়েজ
কোরআনে কারিমে বর্ণিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা যেমন, হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা, বদরের যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, নমরুদের অগ্নিকুণ্ডের কথা, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মরাসহ অনেক নবী-রাসূল, জনপদ ও সম্প্রদায়ের ঘটনা বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক এসব ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ, সেই সঙ্গে মর্যদাপূর্ণও বটে। বিশেষ করে কোরআনে কারিমে বর্ণিত ঘটনাগুলো বেশি গুরুত্ব রাখে। এসব ঘটনায় রয়েছে মানবজীবনের জন্য শিক্ষার অনেক কিছু।
এসব ঘটনার নাটক করা নির্মাণ করা, পরে সেই নাটক দেখা ও দেখানো কোনোটাই জায়েজ নয়। কেননা, তা কোরআনে কারিম অবমাননার শামিল। এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা ও শিক্ষা হলো-
এক. কোরআনে কারিম সম্মানের বাহক। কোরআনের সম্মান হলো- তাতে বর্ণিত সব বিষয়বস্তুকে পূর্ণ আদব ও সম্মানের সঙ্গে তার ভাষায় পড়া, শুনা ও শুনানো। এর বিপরীতে নাটক নির্মাতাদের জন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত কোনো ঘটনাকে নাটকে রূপ দিয়ে তার ভাবার্থ বুঝানোর চেষ্টা করা কোরআনে নিষিদ্ধ আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরতকারী ‘লাহ ওয়া লাইব’ (অনর্থক কাজ)-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এরূপ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
দুই. কোনো নাটকই ছবি মুক্ত হয় না। আর কোনো প্রাণীর ছবি বানানো, দেখা, দেখানো সবই হারাম। আর কোরআনের বিষয়বস্তুকে ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করা কোরআনে কারিমের অবমাননা ও বটে।
তিন. এসব নাটকের পূর্ণতা নারীদের ছাড়া হয় না। নারী দিয়ে নাটকগুলো সাজানো হয়। আর নারীদের ছবি দেখা স্পষ্ট হারাম। বলাবাহুল্য, এমন একটি নাজায়েজ বিষয়কে কোরআনে কারিমের বিষয়বস্তু উপস্থাপনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা নিতান্তই কোরআনের তাচ্ছিল্যের শামিল।
চার. যেকোনো সত্য ঘটনার নাটকই তাতে কিছু কিছু কাল্পনিক বিষয় প্রবেশ করানো ছাড়া সম্ভব হয় না। সুতরাং কাল্পনিক কিছু বিষয়কে সংযোজন করে পুরো নাটককে কোরআনে বর্ণিত বলে প্রচারণা চালানো যার ফলে কোরআন ও কোরআন নয় এমন বিষয় এক হয়ে যায়। উপরন্তু এটি কোরআনের অর্থগত বিকৃতিরও শামিল। তাই তা হারাম।
পাঁচ. কোরআনে কারিমের উল্লিখিত ঘটনার অনেক ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার একাধিক অর্থ ও ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে। অকাট্যাভাবে এর কোনো একটি অর্থকে কোরআনের আসল অর্থ বলে মত ব্যক্ত করার সুযোগ নেই। অথচ নাটকের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিতভাবে একটি ব্যাখ্যা ও অর্থকেই নির্দিষ্ট করে নেওয়া হয়। যার দ্বারা বুঝা যায়, এই আয়াতের একটিমাত্রই অর্থ। এটি একটি নাজায়েজ হওয়ার কারণ।
ছয়. এসব নাটকের উদ্দেশ্য শিক্ষা, ইসলাম প্রচার কিংবা উপদেশ গ্রহণ নয়। বরং খেল-তামাশা ও আনন্দ উপভোগ করা। যার স্পষ্ট প্রমাণ হলো- এসব ঘটনা ওয়াজ-নসিহতের সময় শুনানো হলে, তেমন কউ শুনে না। তবে নাটকের মাধ্যমে দেখালে আগ্রহভরে দেখে ও শুনে। সুতরাং কোরআনকে খেল-তামাশা বানানোর মতো বিষয় কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
অতএব, কোরআনের কোনো ঘটনা অবলম্বনে নাটক নির্মাণ করা, দেখা, কিংবা কম্পিউটার ও মোবাইলে সংরক্ষণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই তা থেকে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।