মসজিদের প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের ফজিলত
আল্লাহতায়ালার কাছে পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান হলো- মসজিদ। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হচ্ছে, মসজিদসমূহ। আর তার নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় স্থান হচ্ছে- বাজারসমূহ।’ –সহিহ মুসলিম
মসজিদ আল্লাহতায়ালা পছন্দনীয় স্থান বলেই, মসজিদে গমনকারীর জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে সওয়াব দেওয়া হয় এবং একটি করে পাপমোচন করা হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জামাতে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে পাপমোচন হয়, দ্বিতীয় পদক্ষেপে একটি সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। মসজিদে গমন এবং প্রত্যাবর্তন উভয় অবস্থায় এই প্রতিদান পাওয়া যায়।’ –আহমদ
তাই সবার উচিত মসজিদে ধীরে-সুস্থে ও শান্তভাবে যাওয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীরস্থীরতা বজায় রাখবে। যেটুকু পাবে আদায় করবে। আর যেটুকু পাবে না তা পূর্ণ করবে। -সহিহ বোখারি: ৫৯৯
মসজিদে আগে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের প্রতি আগ্রহী থাকা সওয়াবের কাজ। এ কাজের জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারত, আজান এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মধ্যে কি ফজিলত, আর তা লটারি ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব না হত, তবে তার জন্য লোকেরা অবশ্যই লটারি করত। আর যদি জানতে পারত, মসজিদে আগে আসার মধ্যে কি ফজিলত, তাহলে তার জন্য প্রতিযোগিতা করে আসত।’ –সহিহ বোখারি: ৬১৫
আর যে মসজিদে আগে আসবে, কোনো কারণ ছাড়া তার প্রথম কাতার বাদ দেওয়া উচিত নয়। এ বিষয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আগে আসল এবং প্রথম কাতার বাদ দিয়ে বসল, সে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করল।
নামাজের দেরি করে আসার দ্বারা বড় কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা হয়। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আগে এসো এবং আমার একতেদা করো। আর তোমাদের পরে যারা আসবে তারা তোমাদের পেছনে দাঁড়াবে। যেসব মানুষেরা দেরি করতে থাকবে আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়ে দেবেন।’ –মুসলিম: ৬৬২
নামাজ আদায়ের উদ্দেশে মসজিদে আগে আসার উপকারিতা অনেক। জামাত প্রথম থেকে পাওয়া যায়, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল নামাজ আদায়ের সুযোগ মেলে। ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করা যায়, কেননা ফেরেশতারা এরূপ ব্যক্তির জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকেন; যে নামাজের অপেক্ষায় থাকা। আর নামাজের অপেক্ষা থাকলে নামাজের সমান সওয়াব মিলে।
মসজিদে প্রবেশ করে কিছু বিধান মানতে হয়। এসব বিধানের অন্যতম হলো- মসজিদে উচ্চস্বরে কথা না বলা, নামাজরত ব্যক্তি বা কোরআন পাঠককে বিরক্ত করা না করা। চাই তা সাধারণ কথা বলার কারণে হোক বা উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করার কারণে হোক।
মসজিদে প্রবেশ করতে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা। আর বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হওয়া। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো- যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন বের হবে বাম পা দিয়ে বের হবে।
মসজিদের মুক্তাদি সর্বদা ইমামের অনুসরণ করবে। কোনো কাজ ইমামের আগে আদায় করবে না। আবার অনেক বিলম্বেও আদায় করবে না। ইমামের পূর্বে কোনো কাজ করা হারাম হওয়া সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সে ব্যক্তি তার মাথা ইমামের পূর্বে উঠিয়ে ফেলে তার কি এ ভয় নেই যে, আল্লাহতায়ালা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দেবেন। -সহিহ মুসলিম: ৬৪৭