নামাজের চেয়ে জুমার খুতবা দীর্ঘ হওয়া সুন্নত বিরোধী
সুন্নত হচ্ছে খুতবার চেয়ে নামাজ প্রলম্বিত হওয়া। খুতবা নামাজ থেকে সংক্ষিপ্ত হবে। হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় সংক্ষিপ্ত খুতবা দিতেন, আর খুতবার চেয়ে নামাজ দীর্ঘ করতেন। তবে মাঝেমধ্যে অবস্থার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ খুতবা দিতেন বলে জানা যায়। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) এমনটিই বলেছেন। -যাদুল মায়াদ: খ. ১, পৃ. ১৯১
সুতরাং আমাদের দেশে যারা লম্বা সময় বাংলা খুতবা দেয়, তারা নিচের হাদিসগুলোর কী জবাব দেবে? কারও জানা থাকলে জানানোর অনুরোধ রইল। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে ভালো হলো- জুমার আগে ৮-১০ মিনিট আরবিতে খুতবা হবে, তারপর খুতবা থেকে লম্বা নামাজ হবে। নামাজের পর ইচ্ছেমতো বয়ান হতে পারে।
আমাদের দেশে সাধারণত আরবি খুতবার আগে বয়ান হয়; এই বয়ান মিম্বরে না হয়ে পৃথক জায়গায়, মিম্বর থেকে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে বসে হতে পারে। এই বয়ানের সঙ্গে জুমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস দেখা যেতে পারে। হজরত জাবের ইবনে সামুরা রাযিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন লম্বা নসিহত করতেন না; কয়েকটি সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন। -সুনানে আবু দাউদ: ১১০৯
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খুতবা সংক্ষিপ্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ: ১১০৮
হজরত তাবেয়ি আবু ওয়ায়েল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একবার হজরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহু সংক্ষিপ্ত (জুমার) খুতবা দিলেন। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবুল ইয়াকযান! খুতবা বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে; আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো। তখন তিনি বলেন, আমি রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: নামাজ লম্বা এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া ব্যক্তির বিচক্ষণতার পরিচয়। সুতরাং তোমরা নামাজ লম্বা করো আর খুতবা দাও সংক্ষিপ্ত। -সহিহ মুসলিম: ২০৪৬
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ লম্বা করতেন আর খুতবা দিতেন সংক্ষিপ্ত। -শুআবুল ইমান: ৮১১৪
হজরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমরা নামাজ লম্বা করো আর খুতবা দাও সংক্ষিপ্ত। -বাদায়েউস সানায়ে: খ. ১, পৃ. ২৬৩
এসব বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, জুমার নামাজ খুতবা থেকে দীর্ঘ হবে। আর এর বিপরীত হচ্ছে- মাকরুহ ও সুন্নতের খেলাফ।
ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবেও বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বিবৃত হয়েছে। ফিকহুস সুন্নাহর মধ্যে (খ. ১, পৃ. ১১২) রয়েছে: আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। -ইকতিজাউস সিরাতিল মুস্তাকিম, পৃ. ১০২