পুঁজিবাজারের প্রধান সমস্যা মানসম্মত আইপিও না আসা

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংবাদ সম্মেলনে বিএমবিএ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্টসহ ডিবিএ-বিএমবিএ’র নেতারা উপস্থিত ছিলেন, ছবি: বার্তা২৪

সংবাদ সম্মেলনে বিএমবিএ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্টসহ ডিবিএ-বিএমবিএ’র নেতারা উপস্থিত ছিলেন, ছবি: বার্তা২৪

কৃত্রিমভাবে নয়, পুঁজিবাজার নিজস্ব গতিতে চলছে উল্লেখ্য করে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, ‘মানসম্মত আইপিও না আসার পাশাপাশি বিভিন্ন গুজবের কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বোর্ড রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবিএ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে চলমান বাজারের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় বিএমবিএ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমানসহ ডিবিএ এবং বিএমবিএ’র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শাকিল রিজভী বলেন, ‘আস্থা ও তারল্য সংকট দূর করতে মানসম্মত অর্থাৎ ভালো ভালো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাজারে আনতে হবে। ভালো আইপিও আনাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিবিএ এক সঙ্গে কাজ করবে। অসৎ উপায়ের কোনো কোম্পানি যাতে আইপিওতে না আসতে পারে, সেই বিষয়ে সোচ্চার হবে ডিবিএ।’

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে নয়, তাদের মিষ্টি দিয়ে পুঁজিবাজারে আনতে হবে। মিষ্টি হলো- এখানে বিনিয়োগ করলে যাতে মুনাফা হয়।’

ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ভালো আইপিওর পাশাপাশি পুঁজিবাজারে চলমান তারল্য সংকট কাটাতে বন্ড ইস্যু করা যেতে পারে। তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারহাউজের বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সক্রিয় হতে পারবে।’

শাকিল রিজভী বলেন, ‘বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্বল আইপিও। দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই বলে আইপিও বন্ধ করা যাবে না, অবশ্যই আইপিও আসতে হবে। সেই আইপিও হতে হবে মানসম্মত। যাতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইপিওতে মানসম্মত কোম্পানি আনার বিকল্প নেই। এই বিষয়টিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ মানসম্মত আইপিও আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এর ফলে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে।’

এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শক্ত ভূমিকা থাকলে ভালো আইপিও আসবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ভালো মানসম্মত কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অবশ্যই শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে।’

তিনি জানান, আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে স্টক এক্সচেঞ্জের মতো আইপিও’র আগে প্রত্যেকটি কোম্পানির ড্রাফট প্রসপেক্টাস ডিবিএ’র কাছে দেয়ার দাবি জানানো হবে। যাতে প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে কোনো সমস্যা পেলে ডিবিএ’র পক্ষ থেকে তা বিএসইসিকে অবহিত করা যায়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শাকিল রিজভী বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ অসৎ উপায়ে আইপিও আনলে ডিবিএ সোচ্চার হবে। ভালো কোম্পানি আসছে না বলে বাজারে ভালো বিনিয়োগকারী আসছে না। যাতে লেনদেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আইপিও’র ক্ষেত্রে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিটিকে আরও ভালো করতে হবে।’

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, তারল্য সংকট, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি থাকা, লভ্যাংশ হিসেবে অতিমাত্রায় বোনাস শেয়ার দেয়া পুঁজিবাজারের দরপতনে প্রভাব ফেলছে।

এ সময় তিনি জানান, স্টক এক্সচেঞ্জের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজের সার্ভিস সেন্টার খোলার নিয়ম রয়েছে। চলতি বছরেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান কার্যালয় নিকুঞ্জে চলে যাবে। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে ব্রোকারেজ হাউসের সার্ভিস সেন্টার খোলার অনুমতি দেয়ার জন্য বিএসইসির কাছে দাবি জানানো হবে।

বিএমবিএর সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এক্সপোজার সমস্যার কারণে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তাই বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যু করার অনুমতি চাওয়া হবে। যে বন্ডের অর্থ মার্চেন্ট ব্যাংকের এক্সপোজারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না।’