উত্থান-পতন আর রোমান্সমাখা শারাপোভার জীবন

  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

১৭ বছর বয়সেই মারিয়া শারাপোভা উঁচিয়ে ধরেন উইম্বলডন ট্রফি, ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর বয়সেই মারিয়া শারাপোভা উঁচিয়ে ধরেন উইম্বলডন ট্রফি, ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ১৭ বছর বয়সে উইম্বলডন শিরোপা জিতে টেনিস প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দেন মারিয়া শারাপোভা। এতেই রঙিন হয়ে উঠে তার ক্যারিয়ার। বনে যান বৈশ্বিক টেনিস তারকা। ২০০৪ সালে তার এ অনন্য অর্জন মোটেই সহজ ছিল না। অনেক চড়াই উতড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এ গ্ল্যামার গার্লকে। উত্থান-পতনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে ৩২ বছর বয়সে এ সুপারস্টার টেনিস থেকে নিলেন অবসর। বিদায় বেলায় তার ক্যারিয়ারের নানা বাঁকে একবার তাহলে ঢু মারা যাক এবার।

পারমাণবিক বিপর্যয়স্থল চেরনোবিল থেকে ৪০ মাইল দূরে ছিল শারাপোভার পরিবারের বসবাস। সেই আদি নিবাসেই মায়ের গর্ভে আসেন শারাপোভা। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার মা-বাবা সাইবেরিয়া চলে যান। দাদিই বুঝিয়ে শুনিয়ে মূলত তার পরিবারকে পাঠিয়ে ছিলেন। পারমাণবিক দুর্ঘটনার তেজস্ক্রিয়তা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য। সেখানেই পৃথিবীর আলো দেখেন শারাপোভা।

বিজ্ঞাপন

সাইবেরিয়া থেকে শারাপোভার পরিবার এবার আবাস গড়ে সোচির ব্ল্যাক সি রিসোর্টে। সেখান থেকে শারাপাভো পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। তখন তার বয়স মাত্র ছয় বছর। সঙ্গে ছিলেন কেবল বাবা। ইংলিশ জানতেন না বলে রাশিয়াতেই থাকতে হয়েছিল তার মাকে। দুই বছরের মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখাও হয়নি শারাপোভার। জীবনের সেই কঠিন সময় পেরিয়ে সেখানেই গড়ে উঠে তার টেনিস ক্যারিয়ারের শক্ত ভিত।

মাত্র ১১ বছর বয়সে নাইকি ও আইএমজির সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি করে ফেলেন শারাপোভা। ছয় বছর পর তার হাতে আসে উইম্বলডন শিরোপা। তার দ্বারে এসে দাঁড়ায় পোর্শে ও এভিয়ানের মতো কোম্পানি। টিন ভোগ ম্যাগাজিনে কাভার স্টারও বনে যান সাবেক এ নাম্বার ওয়ান।

বিজ্ঞাপন

২১ বছর বয়সেই ঘরে তুলে ফেলেন তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি। ক্যারিয়ারের বাকি দুটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম আসে ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকে। অনেকে ক্লে-কোর্টের এই দুটো শিরোপাকে তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বলে মনে করেন। অথচ একটা সময় এই কোর্টে খেলাকে তার মনে হতো `বরফের ওপর গুরুর বিচরণের মতো'।

ডোপ নেওয়ার কালো অধ্যায়ও আছে শারাপোভার ক্যারিয়ারে। হৃদরোগের ঔষধ মেলডোনিয়াম সেবনের দায়ে ২০১৬ সালে ১৫ মাস টেনিস কোর্টে নিষিদ্ধ হয়ে ছিলেন তিনি। মিনারেল মেটাবোলিজম ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার জন্য মস্কোর এক চিকিৎসক ২০০৫ সালে তাকে এই ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে ছিলেন। যা ঠাণ্ডা ও টনসিলের সংক্রমণের হাত থেকে তাকে রক্ষা করত।

কিন্তু ঔষধটি ওই বছরের জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ করা হলেও সেটা জানতেনই না শারাপোভা। এজন্য প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। পরে কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্টে (সিএএস) আপিল করলে তার নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয়।

শুধু র‌্যাকেট হাতে কোর্টেই দাপিয়ে বেড়াননি শারাপোভা। প্রেম-অভিসারেও তার জুড়ি মেলা ভার। তার রোমান্সের কাহিনীও ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মার্কিন পপ রক ব্যান্ড ম্যারুন ফাইভের দলনেতা অ্যাডাম লেভিনের সঙ্গে প্রেম-অভিসার চালিয়ে গেছেন। শোনা যায়, তা শুরু হয় নিজের ১৮তম জন্ম দিনের পার্টিতে দুজনের পরিচয় হওয়ার পর থেকে।

এরপর একে একে এ রাশিয়ান সুন্দরী তার প্রেমের মায়াজালে বন্দী করেন সাবেক মার্কিন টেনিস তারকা অ্যান্ডি রডিক, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক চার্লি এবারসল, বাস্কেটবল খেলোয়াড় সাশা ভুজাচিচ ও বুলগেরিয়ার খেলোয়াড় গ্রিগর দিমিত্রোভকে। শারাপোভা এখন মন দেওয়া-নেওয়া করছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী অ্যালেক্সান্ডার গিলকেসের সঙ্গে।

শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়। ব্যবসায়ী হিসেবেও দারুণ সফল শারাপোভা। টেনিস ক্যারিয়ারের মাঝেই সুগারপোভা নামে গড়ে তুলেন তিনি ক্যান্ডি ও চকোলেটের ব্যবসা। অবসর জীবনে হয়তো এখন এই ব্যবসা আর স্পন্সরশিপ কার্যক্রম নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন।