ছিলেন ক্রিকেটার, এখন পিকআপ ভ্যানের ড্রাইভার!

  • স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফজল সুবহান এখন পিকআপ ভ্যান চালক

ফজল সুবহান এখন পিকআপ ভ্যান চালক

গল্পটা খুবই দুঃখজনক!

গল্প কই? এতো সত্যিকারের জীবন কাহিনী! ছিলেন ক্রিকেটার। খেলেছেন বিরাট কোহলির বিপক্ষেও। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পারফরমেন্সও নেহাত মন্দ কিছু নয়। স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলার। অথচ পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার এখন মিনি পিকআপ ভ্যান চালান।
তাতেও পেটের ক্ষুধা মিটছে না ঠিকমতো। পরিবার নিয়ে কায়ক্লেশে টিকে আছেন কোনো মতে। পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলা এই ক্রিকেটারের নাম ফজল সুবহান।

তার বিপক্ষে খেলা বিরাট কোহলি এখন ভারতের অধিনায়ক। বিত্ত-বৈভবের কোনো কমতি নেই। আর সেই তিনি ফজল সুবহান কখনো আধপেট খেয়ে দিন কাটান। পিকআপ ভ্যান চালানোর কাজও প্রতিদিন জুটে না। পেটে ক্ষিধে নিয়েই শুয়ে পড়তে হয় তখন!

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের মিডিয়ায় সাবেক এই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারের দুঃখভরা জীবন কাহিনী প্রচারের পর ক্রিকেট ভক্তরা পাকিস্তান ক্রিকেটকে ধুয়ে দিচ্ছেন।

মূলত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পাকিস্তান সম্প্রতি যে পরিবর্তন এনেছে, তারই শিকার হয়েছেন ফজল সুবহান। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে নতুন কর্তাব্যক্তিরা বসেছেন। নতুন কিছু নিয়ম-কানুন প্রচলন হয়েছে। আগে বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানি পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিল। কায়েদে আজম ট্রফিতে খেলতো আঞ্চলিক দলগুলো। আর প্যাট্রন্স ট্রফিতে খেলতো বিভিন্ন বিভাগীয় দলগুলো। ইমরান খানের নির্দেশে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে বিভাগীয় দলগুলোকে অবলুপ্ত করে দেয়।

বিভাগীয় দল বিলুপ্ত করে পিসিবি ছয়টি আঞ্চলিক দলগুলোকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আর্থিকভাবে এই নতুন পদ্ধতির প্রচলন মার খায়। রাতারাতি পাকিস্তানের হাজার হাজার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার বেকার হয়ে পড়লেন!

জীবন বাঁচাতে তাদের অনেকে বাধ্য হন পেশা বদলে ফেলতে। সেই তাদেরই একজন ফজল সুবহান। ৩১ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংকের হয়ে খেলতেন। পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ‘এ’ দলের হয়েও খেলে ছিলেন। তখন তার প্রতিপক্ষ ছিলেন ভারতের বিরাট কোহলি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়েছিল। শেষ ম্যাচ খেলেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তার সঙ্গে সেই ম্যাচে সতীর্থ ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় দলের ক্রিকেটার উমর গুল, ইমরান ফারহাতের মতো ক্রিকেটার।

বিজ্ঞাপন

যেভাবে সামনে বাড়ছিলেন তাতে তার চোখেও স্বপ্ন ছিল একদিন টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামার। অথচ ৪০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ৩২.৮৭ গড়ে ২,৩০১ রান করা ফজল সুবহানকে এখন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চিন্তা করতে হয় রাতে পরিবারের খাবার যোগাড় হবে তো?

সুবহান বলছিলেন-‘ভাড়ায় আমি পিকআপ চালাই। এটা আসলে মৌসুমী কাজ। কোনো দিন হয়তো অনেক বেশি কাজ থাকে। আবার কোনো সময় ১০দিন কোনো কাজই নেই!’

নিজের ক্রিকেট জীবনের সেই সুখস্মৃতি প্রসঙ্গে এই ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের শামা টিভিকে জানান-‘বিভাগীয় ক্রিকেটে আমি জান-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে খেলতাম। স্বপ্ন দেখতাম একদিন পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে খেলার। বিভাগীয় ক্রিকেটে খেলার সময় বেতন ছিল এক লাখ রূপির মতো। কিন্তু বিভাগীয় ক্রিকেট বন্ধ ঘোষণার পর বেতন কমে এসেছে ৩৫ হাজার রূপিতে। এই অর্থে পরিবার নিয়ে জীবন কাটানো কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে পিকআপ ভ্যান ভাড়ায় চালাই। তাও ভাগ্য ভাল যে ভ্যান চালানোর এই চাকরি যোগাড় করতে পেরেছি। সামনের দিন কি হবে কে জানে। কিছু করার নেই। পরিবার এবং সন্তানাদিদের জন্য তো আমাকে কিছু করতে হবে।’

ফজল সুবহানের এই দুঃখভরা জীবন কাহিনী শোনার পর পাকিস্তানের বর্তমান ক্রিকেটাররাও হতাশা ভরা মন্তব্য করেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ টুইট করেন-‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা এটা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট নিয়ে পিসিবির নতুন পদ্ধতি মাত্র ২০০ ক্রিকেটারের দেখভাল করছে, কিন্তু হাজার খানেক ক্রিকেটার ও সার্পোটিং স্টাফ এই নতুন পদ্ধতি প্রচলনের ফলে বেকারত্বের জীবন কাটাচ্ছে। আমি ঠিক জানি না, এই দায় কারা নেবে?’

কামরান আকমল তার টুইটে লেখেন-‘এটা সত্যিই খুবই দুঃখজনক বিষয়। বুকটা মুচড়ে উঠছে!’