রাফিনিয়ার হ্যাটট্রিকে ৯ বছর পর বায়ার্নকে হারাল বার্সা
এ যেন শুধু এক জয় নয়। ৪-১ ব্যবধানের এই জয় বার্সার কাছে জয়ের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। মৌসুমের শুরুতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটে বার্সেলোনা যখন প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল বায়ার্ন মিউনিখকে, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল এ জল্পনা কল্পনা।
কিংবা তারও আগে কি? মৌসুমের শুরুতে বার্সেলোনা যখন কোচ করে আনল বায়ার্ন মিউনিখ আর জার্মানির সাবেক কোচ হানসি ফ্লিককে, তখন থেকেই? বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা সেদিনই জার্মান এই কোচকে বলছিলেন, ‘তোমার কাছে কিন্তু আমদেরও একটা পাওনা আছে।’
সে পাওনাটা কী, তা আপনি জানেন। বার্সেলোনার পতন যে স্কোরলাইনটা আরও স্পষ্টভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, তা ছিল চার বছর আগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ওই ৮-২ স্কোরলাইন।
সে হারের দগদগে ঘা কোনো বার্সেলোনা সমর্থকের মন থেকেই মুছে যায়নি, বরং পরের দুই বছরে আরও দুই-দুই চারটি হারে বেড়েছেই কেবল। এখন বার্সেলোনা ডাগআউটের কাণ্ডারি ফ্লিক তখন ছিলেন কাতালানদের ওই ৮-২ দুঃস্বপ্নের কুশীলব। তাকে কোচ করে আনার সময়ে লাপোর্তার বলা ওই পাওনার কথাটা শুধু বার্সা সভাপতির নয়, গোটা দুনিয়ার বার্সা সমর্থককূলেরই মনের কথা ছিল!
বার্সেলোনার মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গত রাতে নেমেছিল ওই মিশন মাথায় নিয়েই, ওই খুনে মানসিকতা নিয়েই। মিনিট গড়ানোর আগেই রাফিনিয়ার গোলটাই তো তার প্রমাণ। বায়ার্ন রক্ষণের পেছনে বিশাল জায়গা ছেড়ে রেখেছিল। ৩৫ সেকেন্ডের মাথায় ফারমিন লোপেজ বলটা বাড়ালেন ওই ফাঁকা জায়গাটাতেই। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বল নিয়ে ম্যানুয়েল নয়্যারকে খাবি খাইয়ে রাফিনিয়া বলটা জড়ালেন ফাঁকা জালে।
বার্সার রক্ষণরেখা বায়ার্নের চেয়ে বেশি হাইলাইনে ছিল। বায়ার্ন বারচারেক ওই ফাঁদে আটকাও পড়ল। তবে তাদের সবচেয়ে বেশি পোড়াবে ম্যাচের শুরুর দিকের হওয়া অফসাইডটায়। হ্যারি কেইনের গোলটা যে বাতিল হয়েছিল ওই অফসাইডে!
তবে সে আক্ষেপটা কিছুটা হলেও কমে ১৮ মিনিটে। কেইন গোল করে সমতায় ফেরান সফরকারীদের। সে সমতা অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি। ৩৬ মিনিটে প্রথম গোলের কারিগর ফারমিনের বাড়ানো বলে গোল করলেন রবার্ট লেভান্ডভস্কি।
বিরতির একটু আগে রাফিনিয়ার আরও এক গোলে ম্যাচটা বায়ার্ন থেকে আরও দূরে নিয়ে যায় বার্সা। বিরতির ওপাশে লামিন ইয়ামালের বাড়ানো বলে রাফিনিয়ার হ্যাটট্রিক পূরণ হয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে বায়ার্নের বিপক্ষে তিন গোল করেন রাফিনিয়া।
এরপর আরও গোল হতে পারত। লেভান্ডভস্কি, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংরা ওভাবে মিস না করলে বার্সেলোনার ব্যবধানটা আরও বাড়তেও পারত। তাই ৪-১ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কাতালানদের।
তবে যা হয়েছে, তাও কম কীসে? ৯ বছর পর বায়ার্নের বিপক্ষে বার্সার জয় তো বিশেষ কিছু হওয়ারই কথা। এই জয়ের ধরন আবার অন্যরকম আশার সঞ্চারও করতে পারে দলটার মগজে। বার্সেলোনার বিপক্ষে আগের দুই জয় এসেছিল ২০০৯ আর ২০১৫ এ, সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ হাসিটা এই দল হেসেছিল।
বায়ার্নের বিপক্ষে সবশেষ কোনো দল প্রথমার্ধে ৩ গোল করেছিল ২০১৪ সালে, রিয়াল মাদ্রিদ; সে বছর দলটা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে! বায়ার্নের বিপক্ষে প্রথমার্ধে কোনো খেলোয়াড়ের জোড়া গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমন কিছু দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে, সেটা করেছিলেন নেইমার। তারপর গত রাতে করলেন তার স্বদেশী রাফিনিয়া। সেবার নেইমার বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন করে তবেই থেমেছিলেন। এবার তবে রাফিনিয়ার বার্সার পালা?