বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে সুপার ফোর পর্বের শুরু
বাংলাদেশের এশিয়া কাপটা কাটছেই যেন হোঁচট খেয়ে খেয়ে। দল ঘোষণার আগেই জানা গিয়েছিল তামিম ইকবাল নেই। শ্রীলঙ্কা যাত্রার দুই দিন পর লিটন দাস ছিটকে যান জ্বরের কারণে। এরপর লঙ্কানদের বিপক্ষে হার সুপার ফোরে খেলাটাই শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল দলের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে সে শঙ্কাটা বিদায় করে শেষ চারে চলে গেছেন সাকিব আল হাসানরা। এবার বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে সুপার ফোর পর্ব। আজ লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যার শুরু।
তবে এই শুরুর আগে আরও একটা হোঁচট খেয়েছে দল। নাজমুল হোসেন শান্ত ছিটকে গেছেন হ্যামস্ট্রিং চোট দিয়ে। পিঠোপিঠি দুই ইনিংসে ৮৯ আর ১০৪ রানের ইনিংস খেলা শান্তর ছিটকে যাওয়া দলের জন্য বড় ধাক্কাই বটে। সেই ধাক্কার পর এবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হবে দলকে। এর আগে অবশ্য একটা সুসংবাদ আছে দলের জন্য।
লিটন দাস ফিরছেন দলে, শান্ত ছিটকে যাওয়ায় তার দলে ফেরা নিয়েও সন্দেহ নেই খুব একটা। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা। এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত ৪৫ ম্যাচে তুলে নিয়েছে ১৮৯ উইকেট, গড় ২৮, স্ট্রাইক রেট ৩১ এর একটু ওপরে। তাদের ঠিক ওপরে, তালিকার শীর্ষে থাকা দলটা আবার এই পাকিস্তান। শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ্, হারিস রউফরা শেষ চার বছর ধরেই বেশ ধারাবাহিক। তাদের পরিসংখ্যানটা দেখুন, ২৯ ম্যাচে তারা শিকার করেছেন ১৬৩ উইকেট। প্রতি ২৯ বলে একবার উইকেট তুলেছেন, রান খরচা হয়েছে উইকেটপ্রতি মাত্র ২৭ করে। তার মানে, প্রথম পাওয়ারপ্লেতে পেসাররা মিলে নিদেনপক্ষে দুটো করে উইকেট শিকার করাটা অভ্যাসেই পরিণত করে ফেলেছেন।
তার প্রমাণটা মিলেছে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের ভারত ম্যাচেই। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, আর শ্রেয়াশ আইয়ারদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন সাজঘরের পথ। এর আগে নেপাল ম্যাচেও ঠিক তাই, পাকিস্তান ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল ২ ওভার শেষের আগেই।
সেই দল, সেই পেস আক্রমণের মুখোমুখিই আজ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের জন্য বড় একটা পরীক্ষাই তাই অপেক্ষা করছে দলের জন্য। পাকিস্তানের পেস আক্রমণ যদি ‘বুনো ওল’ হয়, নাজমুল হোসেন শান্ত হতে পারতেন তার ‘বাঘা তেঁতুল’। শেষ কিছু দিনে দারুণ ফর্মে থাকা সেই তাকেই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দলের টপ অর্ডারের পরীক্ষাটা তাই আরও কঠিনই হলো বৈকি!
সেই পরীক্ষা তো আছেই, সঙ্গে আছে আরও কিছু প্রশ্ন। শেষ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা, পাকিস্তানের টপ অর্ডারেও তো আছেন ইমাম উল হক, ফখর জামান, বাবর আজমরা। বিশেষ করে শেষজন সবশেষ ইনিংসেই খেলেছেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। লাহোরের নিখাদ ব্যাটিং স্বর্গে আগের দিন না হয় আফগান ব্যাটিং লাইন আপকে আটকে দেওয়া গেছে। কিন্তু আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ যে এক নয়! গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তাই আজ কঠিন এক পরীক্ষা তাই বাংলাদেশের পেস আক্রমণের জন্যও অপেক্ষা করবে বৈকি!
আগের ম্যাচে প্রথাগত ব্যাটিং লাইন আপের ধারণা থেকে সরে এসেছিল বাংলাদেশ। শান্তর বিদায়ের পর সে পথেই হাটবে কি না দল, তাও একটা প্রশ্নই হয়ে আছে এখনো।
এ ম্যাচের আগে ইতিহাসও কথা বলছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। পাকিস্তানের মাটিতে তাদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা হয়েছে ১১টা। তার সবকটিতেই হেরেছে দল। সব মিলিয়ে ফলাফলটাও খুব বেশি সুখকর নয়। ১৬ ম্যাচ খেলে জয় মোটে দুটো। এখানে সবশেষ ম্যাচটা অবশ্য জিতেছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে রবিবারের ম্যাচটা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সব মিলিয়ে পরিসংখ্যানটাও কথা বলছে বিপক্ষে, ৩৭ ম্যাচে জয় মোটে ৫টা। শেষ পাঁচ ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ জিতেছে ৪টিতে। আজকের ম্যাচ শেষে পরিসংখ্যানটা ‘শেষ ৬ ম্যাচে ৫ জয়’ এমন কিছুই চাইবে বাংলাদেশ, তা আর বলতে। সেটা হলে যে সুপার ফোরেও শুরুটা ভালোভাবেই হয়ে যাবে দলের! তবে সেটা করতে হলে আগে ওই সব প্রশ্নের জবাবটা খুঁজে বের করতে হবে নিখুঁতভাবে, জিততে হবে ওই খণ্ড খণ্ড লড়াইগুলোও।