অবশেষে জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া
টানা তিন ম্যাচ হেরে সিরিজটা আগেই হাতছাড়া করেছে অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে চতুর্থ ম্যাচে এসে জয়ের দেখা পেল অতিথি দলটি। বাংলাদেশকে তারা ধরাশায়ী করল ৩ উইকেটে। এবং ছয় বল হাতে রেখে। দুরন্ত এ জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল অজিরা।
এলোমেলো ব্যাটিংয়ে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্য মাত্র ১০৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১০৪ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
ব্যাটিংয়ের শুরুটা যাচ্ছে তাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ব্যাট হাতে পুঁজিটা অল্প হলেও বোলিংয়ে লড়াইটা জমিয়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা। অতিথিদের ব্যাটিং লাইন-আপে আঘাতও হানেন মেহেদী হাসান। দলীয় তিন রানেই ফিরিয়ে দেন অজি ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েডকে (২)। লক্ষ্যে অটুট থেকে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
কিন্তু ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ের শুরুটা খুব একটা তেজ দেখাতে পারেননি সাকিব আল হাসানরা। তাই তো তিন নম্বরে নামা ড্যান ক্রিস্টিয়ান বাংলাদেশের সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দেন।
১৫ বলে ৩৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে এ টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান গড়ে দেন জয়ের ভিত। নিজের ঝড়ো ইনিংসটি সাজান তিনি এক বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায়। ক্রিস্টিয়ানের পাঁচটি ছক্কাই মারেন সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় ওভারে।
তার এই ধ্বংসাত্মক ছক্কা উৎসবের সুবাদেই মূলত ম্যাচ বের করে নিয়ে যায় ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েডের দল। পরে ১১ যোগ করেন মিচেল মার্শ। অ্যাশটন আগার খেলেন ২৭ বলে ২৭ রানের অসাধারণ কার্যকরী এক ইনিংস। ফলে মুস্তাফিজের দুরন্ত বোলিংয়ে ৫২ রানে পাঁচ উইকেট ফেলে দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেও লাভ হয়নি। ১৯ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্য ১০৫ রান ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজ চার ওভারে খরচ করেন মাত্র ৯ রান। একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। আর উইকেট শূন্য থেকে সাকিব দেন ৫০ রান।
সিরিজ জিতে ব্যাটিংয়ে নামা। তাই তো টাইগারদের মনটা চাঙ্গা ছিল শুরুতে। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও সৌম্য সরকার ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখিয়ে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে স্বাগতিকদের সতেজ মনোভাবটা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। ৩.৩ ওভারে ব্যক্তিগত ৮ রানে জশ হ্যাজলউডের বলে অ্যালেক্স কেরির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। ২৪ রানে ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি।
ওয়ান ডাউনে নামা সাকিব আল হাসানকে পেয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ফের ২৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন নাঈম। দুজনের সাহসিকতায় পুঁজি বাড়িয়ে নেওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকে টাইগাররা। উইকেট পতনেও আসে সাময়িক বিরতি।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের (১৫) বিদায়ে শুরু হয়ে যায় ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার পালা। ক্রিজের এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নাঈম। তবে ২৮ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেননি এ ওপেনার।
অন্য প্রান্তে যেন চলতে থাকে উইকেট উড়িয়ে দেওয়ার উৎসব। শেষ দিকে আফিফ হোসেন ২০ ও মেহেদী হাসান ২৩ রান যোগ করেন দলীয় স্কোরে।
বাকি ব্যাটসম্যানরা দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহান তো ক্রিজ থেকে ফেরেন শূন্য রানে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন অ্যান্ড্রু টাই ও ম্যাচসেরা মিচেল সোয়েপসন। সঙ্গে জশ হ্যাজলউড দুটি ও অ্যাশটন অ্যাগার একটি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১০৪/৯, ২০ ওভার (নাঈম ২৮, সাকিব ১৫, আফিফ ২১, মেহেদী ২৩; হ্যাজলউড ২/২৪, টাই ৩/১৮)।
অস্ট্রেলিয়া: ১০৫/৭, ১৯ ওভার (ক্রিস্টিয়ান ৩৯, মার্শ ৫১, অ্যাগার ২৭; মেহেদী ২/২৯ , সাকিব ৪-০-৫০-০, নাসুম ১/১৭, মুস্তাফিজ ৪-১-৯-২, শরিফুল ১/৮)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে এখন বাংলাদেশ।
ম্যাচ সেরা: মিচেল সোয়েপসন।