বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ এড়াল শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কাকে প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ সিরিজ নিশ্চিত করেছে আগেই। তাই সফরকারী প্রতিপক্ষকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারল না তামিম ইকবালরা। ঐতিহাসিক প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
শুরু থেকেই ব্যাটিং দাপট দেখান ক্যাপ্টেন কুশল পেরেরা। পেয়ে যান জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা। দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটি হাঁকান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। পরে বল হাতে পেস তোপ দাগান দুষ্মন্ত চামিরা। মাত্র ১৬ রান খরচায় ঝড় তুলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপে মড়ক লাগিয়ে দেন। সঙ্গে ম্যাচসেরা চামিরা গড়েন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব।
তাই তো পেরেরা-ধনাঞ্জয়া-চামিরার ব্যাট বলের নৈপুণ্যে হোয়াইটওয়াশ এড়াল শ্রীলঙ্কা। অতিথি ক্রিকেটারদের কাছে টাইগাররা ধরাশায়ী হলো ৯৭ রানে। তবে হেরেও তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ। কেননা প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেই নিজেদের করে রেখেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের শীর্ষে থাকা টাইগারদের কাছ থেকে দশটি পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল লঙ্কানরা।
চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ২৮ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (১৭) ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের (১) সঙ্গে তিনে নামা সাকিব আল হাসানের (৪) উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় টাইগাররা। আগে থেকেই টপ-অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা ভুগিয়ে যাচ্ছিল স্বাগতিকদের। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও সেই দুঃস্বপ্নটা বিদায় করতে পারল না তারা।
ফের ব্যর্থ হলো দেশের ব্যাটিং লাইন-আপের ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। লোয়ার-অর্ডারেও সেই একই অবস্থা। ভরসা হয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে সেই মিডল অর্ডার। কিন্তু তারপরও পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি দেশের ছেলেরা। তাই আর শেষ রক্ষা হয়নি। ৪২.৩ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস গুটি যায় ১৮৯ রানে।
গত দুই ম্যাচে যে মুশফিকুর রহিম (৮৫ ও ১২৫) ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়েছেন। ব্যাটিংয়ের নির্ভরতার সেই প্রতীক এ ম্যাচে করলেন মাত্র ২৮ রান। তবে সিরিজ সেরার পুরস্কার ঠিকই উঠেছে তার হাতে। মুশফিকের বিদায়ের পর দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু পারেননি। দুজনে ফিফটি করেই বিদায় নেন মাঠ থেকে। মোসাদ্দেক ৫১ রান নিয়ে ফেরেন। আর ৫৩ রানের দাপুটে এক ইনিংস খেলে সবার শেষে আউট হন মাহমুদউল্লাহ।
মিরপুরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কুশল পেরেরা ও ধনাঞ্জয়ার ব্যাটিং তাণ্ডবে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। কুশল পেরেরা দাপুটে ব্যাটিংয়ে দুরন্ত এক সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। খেলেন ১২২ বলে ১১ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ১২০ রানের চমৎকার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস।
তবে সেঞ্চুরি মিস করতে পারতেন পেরেরা। যদি মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ব্যক্তিগত ৯৭ রানে তার তুলে দেওয়া ক্যাচ ধরতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। উল্টো জীবন পেয়ে প্রথম লঙ্কান অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়লেন পেরেরা। আর ফিফটি হাঁকিয়ে অপরাজিত থেকে যান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৭০ বলে ৪ বাউন্ডারিতে এ তারকা লঙ্কান অলরাউন্ডার খেলেন ৫৫* রানের হার না মানা অসাধারণ এক ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে কোনো উইকেটই পাননি তাসকিন আহমেদ। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতেই বোলিং ছন্দটা ফিরে পেয়েছেন এ তারকা টাইগার পেসার। শিকার করলেন ৪ উইকেট। এতেই উইকেট শিকারে ফিফটি করে ফেলেছেন তাসকিন। কিন্তু তার সতীর্থ বোলাররা ঠিক আলো ছড়াতে পারলেন না। ব্যাটিংয়ে নামার আগে বল হাতে ব্যর্থতার গল্প লিখেন সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজ-মুস্তাফিজুর রহমান। তিন জনেই থেকে যান উইকেট শূন্য। যে কারণে শ্রীলঙ্কাকে অল্পতে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। তাতে করে জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করতে পারল না টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২৮৬/৬, ৫০ ওভার (পেরেরা ১২০, ধনাঞ্জয়া ৫৫, গুনাথিলাকা ৩৯, মেন্ডিস ২২ ও হাসারাঙ্গা ১৮; তাসকিন ৪/৪৬ ও শরিফুল ১/৫৬)।
বাংলাদেশ: ১৮৯/১০, ৪২.৩ (মাহমুদউল্লাহ ৫৩, মোসাদ্দেক ৫১, মুশফিক ২৮, তামিম ১৭ ও আফিফ ১৬; চামিরা ৫/১৬, রমেশ ২/৪০ ও হাসারাঙ্গা ২/৪৭)।
ম্যাচ ফল: শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী।
সিরিজ ফল: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ।
ম্যাচ সেরা: দুষ্মন্ত চামিরা।
সিরিজ সেরা: মুশফিকুর রহিম।