ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাট উঁচিয়ে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি উদযাপন

ব্যাট উঁচিয়ে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি উদযাপন

প্রথম ম্যাচের পুনর্মঞ্চায়নই হলো যেন অনেকটা। ব্যাট হাতে প্রথমে ঝলক দেখালেন মুশফিকুর রহিম। পেলেন বিস্ফোরক এক সেঞ্চুরি। গড়ে দিলেন জয়ের শক্ত ভিত। আর বল হাতে বাকি কাজটা সারলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্পিন জাদুতে ধস নামালেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং লাইন-আপে। বোলিংয়ে তোপ দাগিয়ে মিরাজের সঙ্গী হলেন মুস্তাফিজুর রহমান আর সাকিব আল হাসান।

তাতেই বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে পেল ১০৩ রানের দুরন্ত এক জয়। দাপুটে এ জয়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দীর্ঘ দিনের অপূর্ণতা ঘোচাল টাইগাররা। লঙ্কানদের বিপক্ষে জিতল প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এবং সেটা এক ম্যাচ হাতে রেখেই। ইতিহাস গড়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত হলো ২-০ ব্যবধানে।

বিজ্ঞাপন

ঐতিহাসিক এ জয়ে আরও দশটি পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। আট ম্যাচে পাঁচ জয় আর তিন হারে ৫০ পয়েন্টের পুঁজি নিয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

মিরপুরে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে মুশফিকের শতকে ২৪৬ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে স্বাগতিকরা। ঘূর্ণি ঝড় আয়াসের কারণে বৃষ্টির বাগড়ায় শেষ দিকে ম্যাচের পরিধি কমে আসে ৪০ ওভারে। লঙ্কানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান। জবাবে অতিথি শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪১ রানে। 

বিজ্ঞাপন
মুশফিকুর রহিম

প্রথম ওয়ানডেতে যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে সেটাও পারল না। ব্যাট হাতে টাইগারদের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটিং বিপর্যয়ে নিজেদের সপে দিয়ে অতিথিদের হয়ে কোনো ব্যাটারই প্রতিরোধ গড়তে পারলেন না।

আগের ম্যাচের শেষ দিকে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এ ম্যাচে তিনিও পারলেন না কিছু করে দেখাতে। শুরু থেকে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে যায় কেবল শ্রীলঙ্কা। ১০৪ রান তুলতেই তারা হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।

মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

লঙ্কানদের হয়ে ব্যক্তিগত ২৪ রান করেন ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা। দলীয় স্কোরে পাথুম নিসানকা যোগ করেন ২০ রান। কুশল মেন্ডিস ১৫, আশেন বান্দারা ১৫, কুশল পেরেরা ১৪, দাসুন শানাকা ১১ আর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এনে দেন মাত্র ১০ রান। ১৮* রানে অপরাজিত থেকে যান ইসুরু উদানা।

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তার উপাধি। দেশের ব্যাটিংয়ের নির্ভরতার প্রতীক। ব্যাটিং ঝলকে খেতাবের যথার্থতা ফের প্রমাণ করেন মুশফিকুর রহিম। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে আদায় করে নেন দুরন্ত এক সেঞ্চুরি। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হতেই দুষ্মন্ত চামিরার বলে চার মেরেই জাদুকরী তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিক। তারকা এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টানা দুই ম্যাচেই দিলেন ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স।

মেহেদী হাসান মিরাজ

মাঠ থেকে ফেরার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি হাঁকান মুশফিক। ১২৭ বলে ১০ বাউন্ডারিতে খেলেন ১২৫ রানের চমৎকার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। তার সঙ্গে দলের হয়ে যা একটু রান সংগ্রহ করেছেন বলতে- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাস। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে।

শুরুতে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশও। ৭৪ রান তুলতেই তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানসহ চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল টাইগাররা। বলতে গেলে ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে দলকে একাই টেনে তুলেছেন ম্যাচ সেরা মুশফিক। ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপ টপকে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ’র সঙ্গে গড়েন ৮৭ রানের পার্টনারশিপ। আর অষ্টম উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে লিখেন ৪৮ রানের জুটি। তাতেই বড় হয়েছে টাইগারদের পুঁজি। নইলে ব্যাটিংয়ে লজ্জাজনক কিছুই ঘটতে পারতো। দুষ্মন্ত চামিরা ও লক্ষ্মণ সান্দাকান তিনটি করে উইকেট নেন। ইসুরু উদানা নেন ২টি উইকেট।

মাথায় আঘাত পান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন

মুশফিকুর রহিমকে ভালোই সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাফ-সেঞ্চুরির আভাস দিয়ে যাচ্ছিলেন এ তারকা অলরাউন্ডার। কিন্তু লক্ষ্মণ সান্দাকান তাকে ৯ রানের জন্য ফিফটি থেকে বঞ্চিত করেন কুশল পেরেরার হাতে ক্যাচ বানিয়ে। উইকেট থেকে বিদায় নেওয়ার আগে ৫৮ রানে এক বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় দলীয় স্কোরে ৪১ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ।

সাকিব-তামিমের পর উইকেট থেকে বিদায় নেন লিটন দাস। লক্ষ্মণ সান্দাকানের বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন এ তারকা ওপেনার। আউট হওয়ার আগে লিটন ৪২ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ২৫ রান। ব্যাট হাতে সাকিব ব্যর্থ হলেও এ ম্যাচে বল হাতে নিয়েছেন দুই উইকেট। আর মিরাজ ও মুস্তাফিজ উইকেট শিকার করেন ৩টি করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২৪৬/১০, ৪৮.১ ওভার (মুশফিক ১২৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, লিটন ২৫, তামিম ১৩, সাইফউদ্দিন ১১, মোসাদ্দেক ১০ ও আফিফ ১০; চামিরা ৩/৪৪, সান্দাকান ৩/৫৪ ও উদানা ২/৪৯)।

শ্রীলঙ্কা (বৃষ্টি আইনে ৪০ ওভারে লক্ষ্য ২৪৫):  ১৪১/৯, ৪০ ওভার (গুনাথিলাকা ২৪, নিসানকা ২০, উদানা ১৮*, মেন্ডিস ১৫, পেরেরা ১৪, শানাকা ১১ ও ধনাঞ্জয়া ১০; মিরাজ ৩/২৮, মুস্তাফিজ ৩/১৬ ও সাকিব ২/৩৮)।

ম্যাচ ফল: বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে ১০৩ রানে জয়ী।

সিরিজ ফল: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম।