স্বপ্নের বাঁশের ব্যাটে ছুটবে রানের ফুলঝুরি
ক্রিকেট ব্যাট হবে কাঠের তৈরী। এটাই তো চিরাচরিত নিয়ম। ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগাই যে নেই। কারণ ক্রিকেটের নিয়মেই লেখা রয়েছে, ব্যাট হতে হবে কাঠের। অন্য কোনো কিছু দিয়ে তৈরী ব্যাট ক্রিকেট মাঠে চলবে না।
কিন্তু ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ দার্শিল শাহ, মাইকেল রামেজ ও বেন টিঙ্কলার-ডেভিস ব্যাট তৈরি করতে কাঠের বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাঁশ। দীর্ঘ গবেষণার পর বাঁশের ব্যাট তারা তৈরিও করে ফেলেছেন। ব্যাটের মাপে বাঁশ ছোট ছোট করে কেটে একটার সঙ্গে আরেকটি আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে তারওপর দেওয়া হয় চাপ। তাতে দেওয়া হয় রেজিনের প্রলেপ। এরপর সেটা দিয়ে তৈরি করা হয় ব্যাট।
কাঠের ব্যাটের চেয়ে বাঁশের ব্যাটের গণাগুণ বেশি। বেশি শক্ত-পোক্ত। এবং তিনগুণ বেশি ধকল সহ্য করতে পারে। অনেক বেশি ওজন নিতে সক্ষম। কাঠের মত শক্তিশালী। ব্যাটাররা আরও বেশি শক্তি নিয়ে বলে আঘাত করতে পারবেন। আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন। কাঠের ব্যাটের চেয়ে বাঁশের ব্যাট ২২ শতাংশ বেশি মজবুত। ফলে এ ব্যাটের আঘাতে বলের ছুটার গতি আরও বেশি হবে। রানও আসবে বেশি।
ব্যাটের মাঝখানে বল ঠিকঠাকমতো লাগাতে পারলে ব্যাটসম্যান বেশি রান পান। বাঁশের ব্যাটের এই ‘সুইট স্পট’টা বেশি। মানে মাঝের অংশটা বেশি চওড়া। ফলে এই ব্যাট থেকে ছুটবে রানের ফোয়ারা। গবেষকরা এজন্য তাদের উদ্ভাবিত নতুন ব্যাটের নাম দিয়েছেন ‘স্বপের ব্যাট’।
তা কাঠ রেখে বাঁশ কেন বেছে নিলেন গবেষকরা? কারণ ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয় সাধারণত মূল্যবান উইলো কাঠ থেকে। যে কারণে কাঠের ব্যাটের বা উইলোর দাম পড়ে যায় বেশি। অনেক ক্রিকেটারের পক্ষে যেটা কেনা সম্ভব হয় না। একটি গাছ থেকে উইলো কাঠ পেতে সময় বেশি লাগে। বাঁশ সহজলভ্য। দ্রুত বাড়ে। সব জায়গায় পাওয়া যায়। দামেও কম। ফলে ব্যাটের দামও হবে কম। হবে আরও বেশি টেকসই।
নতুন যে সকল দেশে ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে দূর-প্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ক্রিকেটারদের জন্য বাঁশের ব্যাট আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। অনেক কম দামে ব্যাট কিনতে পারবেন তারা। আর পিছিয়ে না থেকে ক্রিকেটেও তারা এগিয়ে যাবেন।
তবে বাঁশের ব্যাটের প্রচলনের সামনে ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়ে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আইন। নিয়ম বলছে, মাঠে কেবল কাঠের তৈরি ব্যাট ব্যবহার করা যাবে। তাতে থাকবে না কোনো প্রলেপ। ১৯৭৯ সালে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট হাতে মাঠে নেমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডেনিস লিলি। এর পরই আসে ব্যাটের নিয়মটা। তবে নতুন ব্যাটের কার্যকারিতার কথা শুনে বাঁশের ব্যাটের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে এমসিসি।