জয়াবিক্রমের জাদুতে ২৫৯ রানে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা, বিপদে বাংলাদেশ
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় ব্যাট হাতে নামতেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা। ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নে ও ওয়ান ডাউনে নামা ওশাদা ফার্নান্ডোকে হারিয়ে দিন শেষে মাত্র ১৭ রান তুলেছে তারা। কিন্তু তারপরও ২৫৯ রানে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
স্বাগতিকরা কাজের কাজটি করে রেখেছে প্রথম ইনিংসেই। ৭ উইকেটে ৩৯৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। পরে প্রবীণ জয়াবিক্রমের ঘূর্ণি জাদুতে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে ২৫১ রানে গুটিয়ে দিয়ে ২৪২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামে দিমুথ করুনারত্নের দল। অভিষিক্ত জয়াবিক্রম ৯২ রান খরচায় একাই শিকার করেন ছয় উইকেট।
এখন শ্রীলঙ্কার যে লিড। তাতে চতুর্থ দিনে বাড়তি একশ রান যোগ করলেই বাংলাদেশের জন্য তা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। তখন হার এড়ানোই কঠিন হয়ে পড়বে টাইগারদের জন্য। কেননা উইকেট এখন বোলিং সহায়ক হয়ে পড়েছে। চতুর্থ ইনিংসে এই উইকেটে ৩৫০ রান করা সংগ্রহ করাটা এখন অনেকটাই অসম্ভব।
তার আগে দিনের শুরুতে ব্যাটিংটা ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু লঙ্কানদের হঠাৎ জোড়া আঘাতে এলোমেলো হয়ে যায় দ্বিতীয় টেস্টে টাইগারদের প্রথম ইনিংসের শুরুটা। ৯৮ রানে থামে তামিম-সাইফের উদ্বোধনী পার্টনারশিপ। সাইফ হাসানের পর বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রমেশ মেন্ডিসের বলে লাহিরু থিরিমান্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান শান্ত চার বল খেলে ফিরেন শূন্য রানে। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে এক রানের ব্যবধানে টানা দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
দলীয় ২২৪ রানে ফের জোড়া আঘাত হানে লঙ্কানরা। শূন্য রানের ব্যবধানে টাইগাররা হারায় মুমিনুল হক ও লিটন দাসের উইকেট। শেষ সেশনে জয়াবিক্রম ও সুরঙ্গা লাকমলের বোলিং দাপটে শেষ দশ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে শেষ চার উইকেট। শেষ ৭ উইকেটে আসে মাত্র ৩৭ রান।
১৫০ বলে ১২ বাউন্ডারিতে ৯২ রানের দাপুটে এক ক্রিকেটীয় ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরেন মেগাস্টার তামিম। এ নিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে টানা চার ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তামিম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে তামিম খেলেন ৯০ ও ৭৪* রানের দুর্বার দুই ইনিংস। লঙ্কা সফরের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্পর্শ করেন হাফ-সেঞ্চুরি। আর এই সিরিজের তিন ইনিংসেই অর্ধ-শতকের দেখা পেলেন তামিম।
টানা দুই টেস্টে নার্ভাস নাইনটিতে আউট হলেন তামিম। এতেই ছুঁয়ে ফেলেছেন নাসির হোসেনের একটি কীর্তি। টাইগারদের হয়ে আগে টানা দুই টেস্টে নব্বইয়ে আউট হয়েছিলেন নাসির। ২০১২ সালে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৯৬ ও ৯৪ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
তার আগে ৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে তৃতীয় দিন সকালে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। লাহিরু থিরিমান্নে ১৪০, দিমুথ করুনারত্নে ১১৮ ও ওশাদা ফার্নান্ডো ৮১ রান এনে দেন। ৭২ বলে ৮ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৭৭* রানের দুর্বার এক ইনিংস নিয়ে অপরাজিত থেকে যান নিরোশান ডিকভেলা। বঞ্চিত হন সেঞ্চুরি থেকে।
৬ উইকেটে ৪৬৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। নিরোশান ডিকভেলা ৬৪ ও রমেশ মেন্ডিশ ২২ রান দিয়ে নতুন দিনে মাঠে নামেন। তৃতীয় দিন ডিকভেলার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। আর রমেশ দলীয় স্কোরে যোগ করেন ১১ রান।
এ দিন ৩.৩ ওভার মোকাবেলা করে লঙ্কানদের দলীয় স্কোরে যোগ হয়েছে মাত্র ২৪ রান। আর পুরো ইনিংস জুড়ে ১২৭ রান খরচায় তাসকিন শিকার করেন ৪ উইকেট। টেস্টে এটাই তার ক্যারিয়া সেরা বোলিং ফিগার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৯৩/৭ ডি., ১৫৯.২ ওভার (থিরিমান্নে ১৪০, করুনারত্নে ১১৮, ওশাদা ৮১, ডিকভেলা ৭৭*, রমেশ ৩৩ ও নিসানকা ৩০; তাসকিন ৪/১২৭, তাইজুল ৮৩/১, শরিফুল ১/৯১ ও মিরাজ ১/১১৮)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৫১/১০, ৮৩ ওভার (তামিম ৯২, মুমিনুল ৪৯, মুশফিক ৪০, সাইফ ২৫, মিরাজ ১৬; জয়াবিক্রম ৬/৯২, লাকমল ২/৩০ ও রমেশ ২/৮৬)।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭/২, ৭ ওভার (করুনারত্নে ১৩* ব্যাটিং, থিরিমান্নে ২, ওশাদা ১, ম্যাথুস ১* ব্যাটিং; তাইজুল ১/২ ও মিরাজ ১/৭)।
#তৃতীয় দিন শেষে