ধলেশ্বরীতে জেগে ওঠা চরের মাটি অবাধে বিক্রি
দেশে যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত তখন টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ধলেশ্বরী নদীতে জেগে ওঠা চরের মাটিতে অবাধে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। থানা ঘাট হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা সংলগ্ন সরাতৈল, বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চরের মাটি অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করছে তারা। বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নদীতে জেগে ওঠা চরের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
সোমবার (৬ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সরাতৈল গ্রামের প্রভাবশালী জুহুরুল মন্ডল, আনোয়ার মন্ডল ও চান মিয়া ধলেশ্বরী নদীতে জেগে ওঠা চরের মাটি বেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কেটে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছে। গ্রামের অসহায় মানুষের জমি জোরপূর্বক নিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। দিন-রাত শত শত ট্রাকযোগে এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় উত্তরবঙ্গে যাওয়া গ্যাস লাইন পাইপের ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। এতে হুমকিতে রয়েছে গ্যাস পাইপ লাইন।
জানা গেছে, মেসার্স মন্ডল বাড়ী বালুর ঘাট নাম দিয়ে সারতৈল বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চরের মাটি দীর্ঘদিন যাবত কেটে বিক্রি করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন সেটি বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। জেগে ওঠা চরে স্থানীয়রা বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ কলার আবাদ শুরু করেছে। সেই আবাদ করা ফসল নষ্ট করে জমির মাটি কাটা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে পণ্যবাহী ব্যতীত সকল যানবাহন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে বালুবাহী ট্রাকগুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে।
সরাতৈল গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী হাসনা বেওয়া বলেন, জোরপূর্বক প্রভাবশালীরা বাড়ির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। এতে ট্রাকের শব্দে ও ধুলায় রাতে ঘুম আসে না। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইমরান নামে আরেকজন বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এলাকাবাসী চলাচলের জন্য মহাসড়ক পর্যন্ত মাটির রাস্তা তৈরি করেছিল ২০১৪ সালে। প্রভাব খাটিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে বিক্রি করছে। অথচ এই মাটির রাস্তার নিচ দিয়ে উত্তরবঙ্গে গ্যাস সরবরাহের জন্য গ্যাস লাইনের পাইপ রয়েছে।
মেসার্স মন্ডল বাড়ী বালুর ঘাটের মালিক জহুরুল মন্ডল বলেন, স্থানীয় এমপি, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনকে অবহিত করেই ঘাট চালাতে হয়। মৌখিক অনুমতি নিয়ে ধলেশ্বরীর চর কেটে বিক্রি করছি। আপনারা সংবাদ লিখে করে কী করবেন। সবাই ঘাট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, থানা সংলগ্ন হলেও ঘাট নিয়ে আমাদের কোনো কাজ নেই। আমরা শুধু মহাসড়ক দেখাশুনা করি। ঘাট নিয়ে ভাবার সময় নেই।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন জানান, ঘাট মালিকরা যে অভিযোগ করেছে সেটা মিথ্যা। ঘাট পরিচালনার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত বিবিএ’র সহকারী প্রকৌশলী এসানুল কবির পাভেল বলেন, নদীর মাটি উত্তোলনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। এক্ষেত্রে অনুমতি দেয়ার বিষয়টিও তাদের নয়। যদি কেউ নদী থেকে মাটি উত্তোলন করে থাকেন তাহলে সেটি দেখবেন উপজেলা প্রশাসন।
অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নীপা।
মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, সুবিধাবাদীরা এখন তার নাম হাট বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছে। এ কারণে বালু ব্যবসায়ীরা সুবিধা আদায়ে তার অনুমতি দেয়ার কথা বলছেন। তবে এ ধরনের কোনো কাজের জন্য জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে সুপারিশ করেননি বলেও জানান তিনি।