সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হওয়া মানুষরা। আন্দোলনে আহত হয়ে আমাদের অঙ্গহানী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ার দাবি করেছেন তারা।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় আহত মানুষরা এসব কথা বলেন।
আন্দোলনে আহত হওয়া মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, আমি ডেমরায় থাকি। আমি সাইনবোর্ডে আন্দোলন করেছি। ২০ জুলাই থেকে আমি আন্দোলনে নেমেছি। পুলিশের গুলিতে আমার একটা হাত এবং একটা পা নষ্ট হয়ে গেছে। আন্দোলনে আহত হওয়ার কারণে আমার কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যায়। আমি কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। সরকারকে বলবো, আমার মতো যাদের অঙ্গহানী হয়েছে, সবার কর্মসংস্থানের একটা ব্যবস্থা করুন।
আন্দোলনে আহত হওয়া আরেকজন ব্যক্তি হচ্ছেন মো. আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই আমি বনানীতে আহত হয়েছি। পুলিশ আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। তাদেরকে আকুতি মিনতি করেও রেহাই পাইনি। আমি খুব গুরুতর আহত হয়েছি। আন্দোলনে আহত হওয়ার কারণে আমার শরীরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, সরকারের কাছ থেকে আমি কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি।
হাফেজ মো. হোসাইন আহমেদ বলেন, আন্দোলনে আমি এক হাত হারিয়েছি। পুলিশের গুলিতে আমার ডান হাত ছিড়ে গেছে। আমাদের বাংলাদেশ একটি ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে চলছে। ৫২, ৭১ এবং ২৪ এসময় গুলোতে শুধু আমরা প্রাণ দিয়েই যাচ্ছি। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করা উচিত। দেশকে একটি গণতান্ত্রিক রূপ দেয়া উচিত। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশকে ইসলামের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবেই এদেশ এগিয়ে যাবে। ইসলামিক ভাবে দেশ পরিচালনা করলে দেশে কোনো চাঁদাবাজি থাকবে না। গুম, খুন কিছুই থাকবে না। আমরা ২৪ কে বুকে ধারণ করি।
মো. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমি মাঠে ছিলাম। ১৮ তারিখে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের সামনে আন্দোলন করা অবস্থায় আমাদেরকে অনেক মায়েরা সাহায্য করেছে। এই একাত্মতা আমরা ৫ আগস্টের পর ধরে রাখতে পারিনি। বর্তমানে আমাদের ঐক্যহীনতা দেখে অনেক খারাপ লাগছে। বনশ্রীতে বেশিরভাগ মানুষ হত্যা করেছে বিজিবি। কিন্তু, এখনও বিজিবি'র সে সমস্ত সদস্যরা কীভাবে বহাল তবিয়তে বসে আছে আমরা সেটা জানতে চাই। সমন্বয়কদেরকে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা ধরে নিয়ে হত্যা করছে। বগুড়ায় একজন সমন্বয়ককে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো নব্য ফ্যাসিবাদ দেখতে চাই না। আমরা সিন্ডিকেটমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ চাই।
মো. ইব্রাহিম বলেন, ৫ আগস্ট বাড্ডাতে আমার একটি পা ভেঙে গেছে। আমরা দেশের পরিবর্তন চাই।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া শহীদ মিরাজ হোসেনের পিতা বলেন, এখনো সকারি দফতর এবং থানায় এখনো স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা বসে আছে। এজন্যই কি আমার ছেলে শহীদ হয়েছেন? যারা শহীদ হয়েছে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের তালিকায় নিয়ে আনতে হবে। আমরা আগামীতে দূর্নীতিমুক্ত একটি দেশ চাই।
আলোচনা সভায় বিগত সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তি খালেদ আহমেদ সোহেলের ছেলে মো. আরিয়ান বলেন, ২০১৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আমার বাবা গুম হয়। কিন্তু, এখনো আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।
মো. সোহেলের ছেলে আমিনুর রহমান রাজ বলেন, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর শাহাবাগ থেকে গুমের শিকার হয়। এখনও পর্যন্ত আমি আমার বাবাকে ফিরে পাইনি। আমি এর বিচার চাই।
নুর হোসেন হিরুর মেয়ে নাবিলা নুর বলেন, ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে যাওয়া সময় চৌদ্দগ্রাম থেকে গুম করা হয়। আমি এর বিচার চাই।
বাংলাদেশ প্রবাসী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং পুনর্বাসন করতে হবে।
এসময় সংগঠনের সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।