করোনা ঠেকাতে মাঠে সশস্ত্র বাহিনী, বেড়েছে সাহস ও আশা

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা ও কৃতিত্ব, ছবি: সংগৃহীত

দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা ও কৃতিত্ব, ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলার বিদ্যমান দৃশ্যপট বদলে গেলো মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী  একইসঙ্গে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। এতে করোনার বিরুদ্ধে মানুষের সাহস ও মনোবল বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক কাঠামোগত শক্তি ও সক্ষমতা  বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সঙ্কুল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে বেড়েছে আশাবাদ। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের এই পদক্ষেপে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণের  ফলে করোনার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন মাত্রা। সামাজিক সাহস ও আশাবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাজের গতিও বেড়েছে। বিশেষ করে, সন্দেহভাজনদের সঙ্গরোধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা বিস্তৃতির মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই আরও সুসংহত হয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেলো।  

বিজ্ঞাপন

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণের মূল কাজ হলো, যারা বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন, সেই নাগরিকদের স্ব স্ব অবস্থান নির্ণয় করে তারা কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গরোধ) আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করা। করোনা মহামারি আকারে ছড়ানোর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এটাই এখন মূল কাজ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

যাদের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, তাদেরকে সঙ্গরোধ করে করোনার বিস্তার ঠেকানোর অতি মৌলিক জরুরি কাজটি বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচারণার পরেও যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়নি। নানা জনবহুল স্থানে বিদেশ প্রত্যাগতদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামায় এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ মাঠে নেমে করোনা মোকাবিলায় ইতিমধ্যে যে গৃহীত বা ভবিষ্যতে গৃহীত হবে এরকম সব সরকারি কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) প্রাথমিকভাবে সকল লেভেলের কমান্ডাররা একটি পর্যবেক্ষণে বের হবেন এবং সমন্বয় সাধন করবেন। তার জন্য যেসব এরিয়াগুলো আছে যেমন, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রামু, বগুড়া, যশোর -সেখানে তাদের লেভেলে তারা সব ধরনের সমন্বয় করবেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, এই সমন্বয়ের জন্য তারা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের কাছে যাবেন। সঙ্গে সেনাবাহিনীর ডাক্তাররাও থাকবেন।

প্রাথমিকভাবে একটি সমন্বিত কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চৌকস সদস্যগণ । এই সমন্বিত কার্যকরী পরিকল্পনায় জেলা পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে অলরেডি যে অ্যাসেসমেন্ট ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে,  সেই অ্যাসেসমেন্ট ও প্রস্তুতির মধ্যে কোন জায়গাটায় সশস্ত্র বাহিনী, সেনাবাহিনী বা নৌবাহিনী কীভাবে ফিটিং হবে, কীভাবে তাদের সহায়তা প্রদান করবে, সেটা চিহ্নিত ও নিশ্চিত করা হবে।

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বাংলাদেশে সংক্রমণ, বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো ও উপকূলীয় এলাকায় 'ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার'-এর  আওতায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। নৌবাহিনী উপকূলীয় এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কাজ করবে। বিমানবাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরি পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সেনা, নৌ ও বিমান শাখার সদস্যগণ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী সাহসিকতার  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা ও কৃতিত্ব। করোনা ঠেকাতে তাদের অংশগ্রহণ পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং করোনা প্রতিরোধের সতর্কতামূলক কার্যক্রমকে জোরদার করার পাশাপাশি দেশব্যাপী  চিকিৎসা সেবার  মানোন্নয়ন ও বিস্তৃতি ঘটাবে।