আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেন নয়!

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলন | ছবি: বার্তা২৪.কম

আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলন | ছবি: বার্তা২৪.কম

নভেল করোনাভাইরাসকে এরই মধ্যে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত জানুয়ারি থেকে চীনের উহান ফেরত নাগরিকদের নিয়মিত আপডেট জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে আসছে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

বিদেশফেরত নাগরিকদের স্বজন ও সাংবাদিকরা যেন আশকোনার হাজিক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে সেখানে ভিড় না করেন, এ জন্যই মূলত সেই সময় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

এরপর আরো দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। উৎপত্তিস্থল চীনের অবস্থার উন্নতি হলেও ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। ইতালিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। পুরো দেশকেই লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছে সে দেশের সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতিও ভয়াবহ।

গত ৮ মার্চ আইইডিসিআর থেকে প্রথম জানানো হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা। এরপর গত ৯ দিনে এই সংখ্যা এসে পৌঁছেছে ১০ জনে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশ কয়েকটি বহুজাতিক, বেসরকারি এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ঘরে বসে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে।

আইইডিসিআর থেকে বলা হয়েছে, হ্যান্ডশেক না করতে, কারো সর্দি-কাশি হলে ঘরে থাকতে, কোলাকুলি না করতে, নিয়মিত সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে, জনসমাবেশে না যেতে এবং গণপরিবহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। যেখানে বেশি মানুষের উপস্থিতি রয়েছে, সেসব স্থানে না যাওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।

যারা করোনাভাইরাসের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন, তারা প্রায় সবাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটটি অনুসরণ করে থাকেন। সেখানে নিয়মিত বিশ্ব পরিস্থিতির যেমন আপডেট জানানো হয়, তেমনি যেকোন ঘোষণার সরাসরি সম্প্রচার হয়। সেখানে মানুষ যেমন তাদের প্রশ্নগুলো করতে পারেন, তেমনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরাও প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।

সম্প্রতি সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দরাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সেরেছেন।

দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা যখন সরাসরি সাক্ষাৎ এড়াতে এ ধরনের ভার্চুয়াল যোগাযোগের ওপর নির্ভর করছেন, তখন আইইডিসিআর কেন পারছে না!

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) আইইডিসিআর-এর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, সেখানে রিপোর্টার, ভিডিও জার্নালিস্ট এবং ফটো জার্নালিস্টের মোট সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। আইইডিসিআর-এর দ্বিতীয় তলার সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রায় ৫০টি চেয়ার বসানো হয়েছে গায়ে গা লাগিয়ে। এছাড়া বাকিরা রয়েছেন দাঁড়িয়ে।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অন্যদের যে ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, একই ধরনের সতর্কতা সাংবাদিকদেরও অনুসরণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আশকোনা হাজী ক্যাম্পসহ যেসব স্থানে সঙ্গরোধের (কোয়ারেন্টাইন) ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেসব স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন৷

আইইডিসিআর-এর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের উপস্থিতি ‘জন সমাবেশ’ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন থেকে আপনাদেরও শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হবে তাহলে। আপনাদের কারো জ্বর রয়েছে কিনা দেখা হবে।

তবে, সংবাদ সম্মেলন, ভিডিও কনফারেন্স বা লাইভের মাধ্যমে করা যায় কিনা? সে প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলেননি মীরজাদী সেব্রিনা।

উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন আইইডিসিআর ভবনে সংবাদ সম্মেলনকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। কারণ সেখানে প্রতিনিয়তই বিদেশ ফেরত অনেকেই করোনা টেস্ট করতে যাচ্ছেন। এছাড়াও বৈশ্বিক পরিস্থিতি যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, তেমনি তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রয়েছে। তাই দেশের অবস্থা ফেসবুক লাইভ বা আইইডিসিআর-এর ওয়েবসাইটে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই হতে পারে।

অবশ্য আইইডিসিআর-এর ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায়, হটলাইনের নম্বর আর দুটি নিউজ শেয়ার করা ছাড়া গত ফেব্রুয়ারি থেকে আর কোন কার্যক্রম নেই। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ওই পেজে পোস্ট করা হয়েছিল সংবাদ। অথচ চীন এবং কোরিয়াতে ‘উইচ্যাট’ এবং ‘লাইন’ এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কমিউনিটিকে পর্যবেক্ষণ এবং সচেতন করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

২০১৭ সালের শেষ প্রান্তিকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহাকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। এর অর্ধেকও যদি সঠিক ব্যবহারকারী হয়, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি এখন দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের জন্য একক বিচরণ ক্ষেত্র। যার ধারে কাছেও কোন গণমাধ্যমের অবস্থান নেই।

দুনিয়াজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক নিউজ বা ভুয়া সংবাদের বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তখন তার প্রধান সমাধানই বলা হয়েছে, সত্য সংবাদের বেশি বেশি প্রচারণা করা। অথচ টুইটার বা ইউটিউব তো দূরের কথা ফেসবুকেই কোন সচেতনতা কার্যক্রম নেই আইইডিসিআর-এর। অথচ ফেসবুক দখল করে রয়েছে ভুল সংবাদ আর তথ্যের প্রবাহ।

সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং করোনাভাইরাস সংকটে এই ধরনের প্রথাগত সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের গুরুত্ব এরই মধ্যে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনাকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।