কিছুই বদলায়নি, মানুষ এখনো টিজ করে: স্কুটিচালক শাহানাজ

  • শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্কুটিচালক শাহানাজ /ছবি: বার্তা২৪.কম

স্কুটিচালক শাহানাজ /ছবি: বার্তা২৪.কম

শাহানাজ আক্তার পুতুলের ছিনতাই হওয়া স্কুটি ফিরে পাওয়ার প্রায় দেড় বছর হতে চললো। এখনো তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন এই স্কুটি চালিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের চালক বৃদ্ধি হওয়ায় উপার্জন কিছুটা কমে গেছে তার। তবে স্কুটি চালিয়ে শহর চষে বেড়ানোর নেশা বা পেশা কোনটাই দমেনি তার। স্কুটি চালিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন সংগ্রামী এই মা।

তবে সব কিছু মিলে ভাল আছেন শাহানাজ বললেন নিজেই। বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফিরে গেলেন ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বাইক চুরি যাওয়ার দিনে। শাহনাজ বলেন, স্কুটি হারানোর পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে পেয়ে যেভাবে আলোচনায় উঠে এসেছিলাম, তাতে মনে হয়েছিল এই শহরটা আমার মত নারী বাইকারদের জন্য সহজ হয়ে গেল। স্বামী দায়িত্ব পালন না করলেও দুই মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকাতে আর কোন বাধা থাকলো না। কিন্তু না তা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এখনো এই শহরের মানুষ বদলায়নি। এখন নারী হয়ে রাস্তা-ঘাটে যখন স্কুটি চালাই, মানুষ নিয়মিত টিজ করে আমাকে। আগে চুপচাপ থাকতাম। এখন আর থাকি না। প্রতিবাদ করি। তাতে কি! এসব করে কত জনকে আমি পরিবর্তন করবো?

শাহানাজ বলেন, গতকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) গাবতলীতে একটা ট্রিপ নিয়ে গিয়েছি। ভদ্রলোককে নামিয়ে দিয়ে একটু দাঁড়িয়েছি। আমাকে দেখে অন্য একজন বাইক চালক বুকে থু থু দিলেন। খারাপ লাগলো, কিন্তু কিছু বললাম না। কেননা আমারতো উপার্জন কমে যাচ্ছে না। আমি গতকাল ১২০০ টাকা উপার্জন করেছি। মাসে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছি। দুই মেয়ে নিয়ে মিরপুরে থাকি। শহরের কিছুর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলে এই শহরটা আমার হত, আমাদের মত অসহায় নারীদের জন্য হত।

রোববার (১৫ মার্চ) এখন ভরদুপুর। মিরপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ভালোই আছি। ভালোই চলছে সব কিছু!

এর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় তখন অনেক কিছু ছাপিয়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের একজন স্কুটি চালক ও তার স্কুটি চুরি যাওয়ার গল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন শাহানাজ আক্তার নামের এই নারী। সে সময় একটি লাইন দিয়েই বোধহয় তিনি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিলে- ‘আমার বাইকে চড়তে আপনার আপত্তি নাই তো?’

ছিনতাইয়ের পর উদ্ধার হয় শাহানাজের স্কুটি/ছবি: বার্তা২৪.কম

যেভাবে ছিনতাই হয়েছিল শাহনাজের স্কুটি: ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি মিরপুরের শ্যামলী এলাকায় জনির সঙ্গে শাহনাজের পরিচয় হয়। এ সময় জনি নিজেকে পাঠাও চালক বলে পরিচয় দেন। তিনি শাহনাজকে একটি স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন বলে জানায়। তার কথায় আশ্বস্ত হলে সে ১৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টার সময় শাহনাজকে খামারবাড়ি এলাকায় আসতে বলেন।

তার কথামতো স্কুটি নিয়ে যথাসময়ে সেখানে এলে হঠাৎ তিনি শাহনাজের স্কুটিতে উঠে বসে। এরপর তার অনুরোধে বিমানবন্দর এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে ফের মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আসেন তারা। এরপর একটি টং দোকানে জনির সঙ্গে চা খান শাহনাজ। এ সময় জনি স্কুটি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে শাহনাজ তাকে অনুমতি দেন। এরপর চালানোর নামে কৌশলে জনি স্কুটিটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

স্কুটি ছিনতাইয়ের ১২ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করে পুলিশ। একদিন পর বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে উদ্ধার করা বাইকটি শাহানাজের হাতে তুলে দেন তখনকার তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। উপহার হিসেবে তেজগাঁও পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শাহানাজ বলেন, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুলিশ ভাইয়েরা আমার বাইকটি উদ্ধার করে দিয়েছেন। তারা যেন আমার মতো অন্য সাধারণ মানুষের পাশেও এভাবে থাকেন, এই কামনা করি।’