পাপিয়ার মোট সম্পদ ১৮ লাখ টাকা!

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শামীমা নূর পাপিয়া

শামীমা নূর পাপিয়া

পাঁচতারকা হোটেলে চার মাসে কোটি কোটি টাকা বিল দেওয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার দাবি, তার সম্পদের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা। আর বছরে আয় করেন মাত্র ৩ লাখ টাকা। এমন মিথ্যা তথ্য জানিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসেছেন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত এই নেত্রী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে পাপিয়া দেখিয়েছেন, নরসিংদীর কেএমসি এন্টারপ্রাইজই তার সম্পত্তি ও আয়ের উৎস। এই সম্পদ টাকার অংকে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আর গত বছর মাত্র ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। অথচ গ্রেফতার হওয়ার সময়ই তার কাছ থেকে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও ১০টি এটিএম কার্ড পায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বিজ্ঞাপন

নাম না প্রকাশের শর্তে এনবিআরের একজন সদস্য বলেন, ‘কর ফাঁকি দিতেই সরকারের করমুক্ত সুবিধা নিয়েছেন পাপিয়া। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, নারী ও ৬৫ বছর বয়সীদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। করমুক্ত সুবিধা নিতেই তিনি আয় কম দেখিয়েছেন।’

এদিকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে নরসিংদীর প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংক লিমিটেডে অর্ধডজন ব্যাংক হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ লাখ টাকা জমা আছে বলে জানা যায়।

পাপিয়ার অঢেল সম্পদের হিসাব মেলাতে পাঁচতারকা হোটেল দি ওয়েস্টিন ঢাকা ও আবাসন প্রতিষ্ঠান ডম-ইনো বরাবর চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

গত ২ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজের সই করা ওই তলবি চিঠিতে উল্লেখ করা চাহিদাকৃত নথিপত্র ৮ মার্চের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো— হোটেল ওয়েস্টিনে থাকা ও খাওয়ার বিলের কপি, বিভিন্ন সময় হোটেল বুকিংয়ের নথিপত্র ও কার কার নামে রুম বুকিং করা হয়েছে ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট নথিপত্র।

টানা চার মাস ৯ দিন গুলশানের একটি পাঁচতারকা হোটেলের চারটি কক্ষ (একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটসহ) ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হোটেল ভাড়া, খাবার, আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন তিনি। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করেছেন আড়াই লাখ টাকা। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ডম-ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো আরেক চিঠিতে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসার বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফার্মগেটের ২৮ ইন্দিরা রোডের রওশন’স ডম-ইনো বিলিভোতে বসবাস করতেন তিনি। বিলাসবহুল ভবনটিতে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন।
পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদক ও জাল টাকার ব্যবসা, বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পদ পাচার এবং কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এখন এগুলো খতিয়ে দেখছে দুদক।

এর আগে পাপিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ও শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে র‌্যাব। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়া ওরফে পিউসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। বাকিরা হলো— পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা। এরপর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পায় র‌্যাব।

র‌্যাবের অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়া-সুমন দম্পতির বাসা থেকে পিস্তল, গুলি ও গুলির ম্যাগাজিন, বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।