প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, দরপত্র চূড়ান্তে ব্যর্থ বিজিএফসিএল

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পেট্রোবাংলা ভবন

পেট্রোবাংলা ভবন

গ্যাসের চাপ কমতে থাকায় কমপ্রেসর স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসে। ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

কাজ শুরু করাতো দূরের কথা, চার বছর পেরিয়ে গেলেও ফাইল ওয়ার্ক শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। একবার টেন্ডার করা হলেও সর্বনিম্ন দরদাতার জালিয়াতির কারণে ফের টেন্ডার করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এই দিনাতিপাতের কারণে খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা করছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বন্ধের শঙ্কা রয়েছে। গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ১৯৬৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ধরা হয় ৭ হাজার ৫৮২ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৪২ বিসিএফ গ্যাস, যা উত্তোলনযোগ্য মজুদের শতকরা ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

অনেক পুরনো গ্যাসক্ষেত্র হওয়ায় দিন দিন গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কমপ্রেসর জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে বিজিএফসিএল’র পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কয়েকটি কূপে বছরে ৯০ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চাপ) হারে চাপ কমে যাচ্ছে। চাপ কমার এই ধারা অব্যাহত থাকলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিজিএফসিএল’র মতে, উৎপাদন কমে গেলে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি হবে। আইওসি’র দর অনুযায়ী বছরে ৩০ কোটি ডলারে সমপরিমাণ গ্যাস থেকে বঞ্চিত হবে পেট্রোবাংলা। সমপরিমাণ গ্যাস এলএনজি আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হলে বছরে ব্যয় হবে এক বিলিয়ন ডলার। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে এডিবির অর্থায়নে সাতটি কমপ্রেসর বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেওয়া সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি কোম্পানিকে যোগ্য ঘোষণা করে বিজিএফসিএল। সর্বনিম্ন দরদাতা টেকনোস্ট্রিম এনার্জিকে দরপত্র জামানত ও কার্যসম্পাদন জমা দিতে বলা হয়। দরপত্র জামানত সাড়ে ১২ কোটি (বিড বন্ড) টাকা জমা দিলেও কার্য সম্পাদন জামানত ৭২ কোটি টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।

পরবর্তীতে স্থানীয় প্রতিনিধি মজুমদার এন্টারপ্রাইজ দরপত্র জামানত সাড়ে ১২ কোটি টাকা তুলে নেয়। এ ছাড়া দরপত্রে উল্লেখিত ঠিকানা ভুয়া বলে প্রমাণ পায় বিজিএফসিএল। বিজিএফসিএল এডিবিকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, আমাদের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক টেকনোস্ট্রিম এনার্জি’র দরপত্র জামানত নিয়ে একটি অডিট পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, দরপত্র জামানত (বিড সিকিউরিটি) প্রিমিয়ার ব্যাংক গুলশান-২ শাখা হতে ইস্যু করা হয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে পাওয়া দরপত্র জামানতের কপির সঙ্গে বিজিএফসিএলের টেকনো থেকে পাওয়া কপি যা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়েছে তার মিল নেই। এ ছাড়া দরপত্রে উল্লেখিত ঠিকানায় কোম্পানির কোনো অফিস খুঁজে পায়নি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ কারণে বিজিএফসিএল বোর্ড সভায় টেকনোস্ট্রিম এনার্জি ও মজুমদার এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পুনরায় দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে এডিবির সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিকুর রহমান তপুকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএস দিলেও সাড়া দেননি।

তবে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘নথিপত্রের প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার দরে পার্থক্য ৪৩ কোটি টাকা। তাই আবার দরপত্রের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতেই এই প্রকল্পের অনেক সময় চলে গেছে। আবার দরপ্রক্রিয়ায় গেলে সময় একটু বেশি লাগবেই। তবে আমরা দ্রুত সম্পাদনের চেষ্টা করছি।’

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুনঃদরপত্র আহ্বানের চাইতে দ্বিতীয় দরদাতার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কাজ দেওয়া গেলে দেশের জন্য মঙ্গল। এখানে কালক্ষেপণ মানে উচ্চদরে এলএনজি আমদানি। অল্প পরিমাণে এলএনজি আমদানির প্রভাবে পুরো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত অস্থির হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে আহূত দরপত্র এখন এসে বাতিল করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ২ বছর। আর কাজ শুরু করার পরও ২বছরের মতো সময় লাগবে। সে হিসেবে পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়ায় যাওয়ার অর্থ আরও ৪ বছর সময় প্রয়োজন।

২০১৬ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে কূপগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে হিসেবে রেড জোনে চলে এসেছে কূপগুলো।