জঙ্গিদের ‘উলফ প্যাক’ হামলার ঝুঁকি এখনো কাটেনি!

  • শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর হামলাসহ কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণে নব্য জেএমবিসহ কিছু জঙ্গি সংগঠনের ‘লোন উলফ বা একাকী ধাঁচের’ হামলার প্রবণতা বেড়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেডিক্যালাইজড বা একই মতাদর্শের কয়েকজন মিলে হামলা চালাচ্ছেন। কয়েকজন মিলে চালানো এ হামলাকে বলা হচ্ছে ‘উলফ প্যাক’।

সর্বশেষ ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর এলাকার দুই নম্বর গেট মোড়ের পুলিশ বক্সে ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হন।

পুলিশ বলছে, এ আইইডি বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির স্থানীয় একটি উলফ প্যাক জড়িত। এর আগে একই কায়দায় ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ পাঁচটি স্থানে এবং খুলনায় আওয়ামী লীগ অফিসসহ দু’টি স্থানে আইইডির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ঢাকা ও খুলনার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির সদস্যদের ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনা নতুন ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখনো পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে, চট্টগ্রামের আইইডি তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী। ঢাকা ও খুলনার ঘটনাগুলোর চেয়ে এটিতে বেশি বিস্ফোরক ছিল। তবে স্থানীয়ভাবে আনাড়ি হাতে তৈরি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপারেশন) পলাশ কান্তি নাথ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত বছর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। রকেট ফ্লেয়ার, জিআই পাইপ, বল বিয়ারিং, ব্যাটারি ও সার্কিট দিয়ে এ আইইডি তৈরি করা হয়েছে। এখানে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতে পারত।

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যুক্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকর্তারা জানান, তারা ধারণা করেছিলেন, রাজধানীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির নেটওয়ার্কটি শনাক্ত করা গেলে আপাতত জঙ্গি হামলার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু হঠাৎ বন্দরনগরীতে হামলার ঘটনার পর নতুন করে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, নব্য জেএমবির বর্তমান আমিরের নাম আবু মোহাম্মাদ আল বাঙালি। তার নেতৃত্বে নব্য জেএমবির পৃথক একটি সেল সংগঠিত হয়ে হামলার পরিকল্পনা করছে। তবে পুরো নেটওয়ার্কটি শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।

নব্য জেএমবির এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন বার্তা২৪.কমকে, অগ্রগামী চিন্তা থেকে অনেকে রেডিক্যালাইজড হচ্ছেন। এ রেডিক্যালাইজেশন সন্ত্রাসবাদে রূপ নেয় কি না দেখতে হবে। কৌশলগত নেতা থাকলেই সেটা সম্ভব। এটা আমরা দেখছি। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কাজ করছি, যেন নব্য জেএমবির সদস্যরা হলি আর্টিজানের মতো ঘটনা না ঘটান। যদিও আর এমন সামর্থ্য তাদের নেই।

একই বিষয়ে কথা বলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। জঙ্গি বা সন্দেহভাজনদের নিয়ে মানুষ তথ্য দিলে ‘একাকী হামলা’র প্রবণতাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন