প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারী সংহতির ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নারী দিবস ও নারী সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ

নারী দিবস ও নারী সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ

নারী দিবস ও নারী সংহতির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ করেছে নারী সংহতি।

‘আসুন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাড়ায়-মহল্লায় রুখে দাঁড়াই, আমরাই প্রতিরোধের শক্তি হই’ আহ্বানে শুক্রবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশে আয়োজিত হয়।

বিজ্ঞাপন

নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল মরিয়মের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, নারী সংহতির রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইকরামুন্নেসা চম্পা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কানিজ ফাতেমা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক তসলিমা তাহরিন প্রমুখ।

সমাবেশে সংহতি জানান গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের সংগঠক বিথী ঘোষ। এ ছাড়াও সমাবেশে নারী সংহতির সদস্য সদস্য সুলেখা রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারা দেশে নারীর ওপর নিপীড়ন-ধর্ষণ বেড়ে চলেছে। নারীদের নিরাপদে চলাচলের পরিবেশে বিঘ্নিত হচ্ছে। তারা সব জায়গায় বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর কারণ দেশে ধর্ষণ-নিপীড়নের যত ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না। বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাসীন দল নানানভাবে প্রভাবিত করছে। অন্যায়ের বিচার বাধাগ্রস্ত করছে এবং থামিয়ে রাখছে। এসব ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সদস্যরাই বেশি জড়িত।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারী সংহতির মিছিল

বক্তারা বলেন, এ দিবসের মূল সৈনিক ছিল শ্রমজীবী নারীরা। তারা একশ বছর আগে কারখানার নিরাপদ পরিবেশের দাবিসহ দেশের নানা সংকট সমাধানে দাবি তুলেছিল। বাংলাদেশে এখনো নারীর নিরাপত্তা চেয়ে, পথে-ঘাটে নিরাপদ পাবলিক টয়লেট চেয়ে, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য, শিশু দিাবযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং যৌতুকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে নারী শ্রমিকদের নারীদের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নারীরা থাকার পরও এ দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো চরমভাবে পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না।

বক্তারা বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের হিসাবে, ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ১১৪ জন নারী-শিশু ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন। এ বছরের জানুয়ারির শুরুতেই রাজধানীর কাফরুলে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন একজন পোশাক শ্রমিক, তার পরদিন সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিশু, এরপর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এগুলোর বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সদস্যদের মাধ্যমে ঘটছে। আবার সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত এলাকাগুলোতে বা এর চারপাশেও নারীরা নিরাপদ নয়। কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ-হত্যাকারীদের এখনো চিহ্নিত করেনি সরকার। নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নে সরকার ও রাষ্ট্র ক্রমাগত ব্যর্থতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সমতলের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক আদিবাসী নারীদেরও ধর্ষণ ও নিপীড়ন জারি আছে। সেখানেও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হামলাসহ সব ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে।

এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, বেশির ভাগ ঘটনারই কোনো বিচার না হওয়া এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নেই এমন ধর্ষক-নিপীড়কদের কেবল বিচার করা হয়। এ কারণে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখানে বিচারহীনতা ও নির্যাতনের পরিবেশ বাজায় রেখেছে। এ অবস্থায় কেবল বিচার চাওয়া নয়, এ রাষ্ট্রীয় সংকট কাটাতে দেশের সচেতন-সংগঠিত নাগরিক সমাজের সক্রিয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধই নিরাপদ মানবিক সমাজের নতুন দিশা দেখাতে পারে।