সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী রংপুরের সোহানুজ্জামান নয়নের (২৪) বাড়িতে শোকের মাতম। বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ফায়ার কর্মী হিসেবে যোগদান করলেও স্বচ্ছলতা ফেরানোর আগেই লাশ হয়ে ফিরল নয়ন।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় সচিবালয়ের আগুন নেভানোর জন্য অন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সোহানুজ্জামান নয়ন। এ সময় হঠাৎ বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয় না নয়নকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ফায়ার কর্মী সোহানুজ্জামান নয়নের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আট পনিয়া গ্রামে।
নয়নের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক আখতারুজ্জামানের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। ছোট বেলা থেকে তার ফায়ার সার্ভিসে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০২২ সালে যোগদান করেন ফায়ার কর্মীর চাকরিতে। নয়নের মূল কর্মস্থল ছিল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশনে। সেটি ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত ছিল। দরিদ্র পরিবারে স্বপ্ন পূরণের একমাত্র ভরসার মৃত্যুতে নিভে গেল আলো। পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বইছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শেষ বারের মত একনজর দেখতে দূর- দুরান্ত থেকে বাড়িতে এসে ভিড় করছেন স্বজনরা।
নিহত নয়নের বাবা আখতারুজ্জামান জানান, দরিদ্র পরিবারে খুব বুকভরা স্বপ্ন নিয়া খুব কষ্টে মানুষ করছি সন্তানকে। নয়নের অনেক স্বপ্ন ছিল এই চাকরিকে ঘিরে। উচ্চপদ আর পরিবারের অভাব মুছতে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছিল। চাকরির বয়স কেবল ২ বছর, শুরুর আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
স্বপ্ন পূরণের আগেই ঝড়ে গেল নয়নের প্রাণ। ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবারের অভিযোগ, আগুন নেভানোর সময় পুরো এলাকা যদি সুরক্ষিত রাখা হতো তাহলে এই দিন দেখতে হতো না। তারা ঘাতক ট্রাক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা।
ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে স্থানীয় রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়ে প্রতারিত হয়েছেন হাবিব উল্লাহ (৩২) ও মো. শাহজাহন (২২)। সম্পর্কে তারা দুজন মামা-ভাগ্নে। বর্তমানে সৌদি আরবে আরেক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।
পরিবারের কাছে ভিডিও কলে প্রবাসে বন্দি জীবনের বর্ণনা জানিয়ে নিজেদের উদ্ধার ও দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইলের গাঙ্গাইল ইউনিয়নের পাঁচগয়েমপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ছেলে হাবিব উল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহান ১০ লাখ টাকা দিয়ে গত ১৩ নভেম্বর সৌদি আরবে যান। বাংলাদেশ থেকে রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তি তাদের পাঠালেও ওই দিন সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছানোর পর দুজনকে রিসিভ করেন সেখানকার দালাল আলম মিয়া। গত কয়েক দিনে ঘুরেফিরে ওই এলাকার তিনটি জায়গায় রাখা হয়েছে তাদের। বিদেশে পাঠানো ব্যক্তির কথামতো কোনো ধরনের কাজ পাননি তারা।
কোনো ধরনের কাজ না পেয়ে তারা দেড় মাস ধরে আটক থাকা অবস্থায় শুধুই ডালের পানি দিয়ে ভাত খেয়ে জীবন পার করছেন। পরিবারের লোকজন এ অবস্থার কথা শুনে ও মোবাইলে দৃশ্য দেখে পাগলপ্রায়। বিদেশে পাঠানো দালাল রঞ্জু মিয়াও এখন লাপাত্তা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভিডিও কলে কান্নায় ভেঙে পড়ে শাহজাহান তার পরিবারকে বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করো।’
শাহজাহান আরও বলেন, তারা দেড় মাস ধরে আটক রয়েছেন রিয়াদের সোলাই-১৫ এলাকায়। হয়তো নির্ধারিত সময়ের পর এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, বিদেশে নেওয়ার আগে দালাল রঞ্জু মিয়া জানিয়েছিলেন, যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা বেতনের কাজ পাবেন। কিন্তু সৌদিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। এ অবস্থায় রঞ্জুকে খোঁজ করে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ফোন করলেও তিনি ধরেন না।
সৌদিতে থাকা প্রতারণার শিকার শাহাজানের স্ত্রী শরমিন জানান, স্বামীর মোবাইলে ভিডিও কল দেন। স্ত্রীকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ে শাহজাহান বলেন, 'আমি বাঁচতে চাই, দেশে যাওয়ার তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো।'
কুমিল্লা জেলা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় শফিউল্লাহ (১৮) নামে এক যুবককে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে সদরের দক্ষিণ ব্রাহ্মণপাড়া খানকা শরীফের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া সদরে ডাব বিক্রেতা এরশাদ মিয়ার ছোট ছেলে সানাউল্লাহ সাথে একই এলাকার জহিরুল ইসলাম এর ছেলে হৃদয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হৃদয় সানাউল্লাহ কে চর থাপ্পড় মারে। এ নিয়ে সানাউল্লাহ বড় ভাই সফিউল্লাহ কয়েকজন লোক নিয়ে বিষয়টি জানতে গেলে হৃদয়ের নেতৃত্বে ৭-৮ জন ছেলে শফিউল্লাহকে ধারালো ছোড়া দিয়ে পেটের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করলে ঘটনার স্থলে শফিউল্লাহ মাটিতে লুটে পড়ে যায়।
ঘটনার স্থল থেকে স্থানীয় লোকজন শফিউল্লাহকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা অবনতি দেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিউল্লাহ কে মৃত্যু ঘোষণা করে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৃত সফিউল্লাহ এর বাবা এরশাদ মিয়া বলেন, আমার নিরীহ ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হৃদয় ও তার সহযোগীরা ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ মো.দেলোয়ার হোসেন জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সফিউল্লাহ মারা যায়। আমি ঘটনাটি শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চলছে।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় মুক্তা শেখ হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাবু (৩৮) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে পটুয়াখালীর লেবুখালী পায়রা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে দুমকি থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, কুয়াকাটা থেকে প্রাইভেটকারে ফেরার পথে মদ্যপ অবস্থায় টহল পুলিশের নজরে আসেন মেহেদী হাসান। তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের যুবদলকর্মী মুক্তা শেখ হত্যা এবং মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন মেহেদী। কুয়াকাটায় পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণকালে ফেসবুকে লাইভে আসেন তিনি। এ লাইভ দেখে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ও পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। কুয়াকাটায় ধাওয়া খেয়ে তিনি দ্রুত বরিশালের দিকে পালানোর চেষ্টা করলেও পায়রা সেতুর টোলপ্লাজায় আটক হন।
দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, বাগেরহাট জেলা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কচুয়া থানা পুলিশের হাতে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।