‘ট্রেন ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন কমাতে পারে দুর্ঘটনা’

  • তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম (ফাইল ফটো)

ছবি: বার্তা২৪.কম (ফাইল ফটো)

দূরের কিংবা কাছের যেকোনো যাত্রায় নিরাপদ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ট্রেন যাত্রা। সময়ের সঙ্গে ট্রেনে চলাচল করা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালু করছে। তবে বেড়েছে শুধু ট্রেনের সংখ্যা, রেলপথ সংস্কার থেকে শুরু করে গোটা ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি পাল্টে দিয়েছে প্রেক্ষাপট।

নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিতে ব্যর্থতাসহ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা দৃষ্টিগোচর হয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতায়াত করা যাত্রীরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক এবং ডিজিটালাইজেশন করা হলে কমতে পারে রেল দুর্ঘটনা।  

এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সংখ্যক ট্রেনে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মেশিনের মাধ্যমে টিটিরা বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রী থেকে খুব সহজেই জরিমানা আদায় করতে পারবেন। এমনকি কত টাকা জরিমানা আদায় করা হলো সেটাও অটোমেটিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে দেখানো হবে। মূলত এটি ডিজিটালাইজেশনের একটি ধাপ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০১৯ সালের বার্ষিক রেল দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যও ছিল বেশ শঙ্কার। গেল বছর রেলপথে ৪৮২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত, ৭০৬ জন আহত হয়েছে।

সম্প্রতি ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা রোধে রেল ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া চলমান। তাছাড়া রেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের আরও সচেতন করার জন্য বিভিন্ন মোটিভেশনাল কাজও চলছে।

মূলত ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে রেল ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন করার প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেন রেলমন্ত্রী।  

এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, 'রেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ট্রাক, কোচ, ব্রিজ ইত্যাদি মেইনটেন্যান্স অভাব। এ ছাড়া অবৈধ লেভেল ক্রসিং গেট দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, ইঞ্জিন বিকল হওয়া, ট্রেন থেকে যাত্রী লাফ দেয়া, রেল লাইন ভেঙে যাওয়া, টেলিফোন ব্যবস্থার অচলাবস্থা, লাইনের পয়েন্ট ফেটে যাওয়া, ট্রেন পার্টিং লাইনচ্যুতি, রেলগাড়ির ক্ষতির কার্যক্রম করা, লাইনের ওপর দিয়ে গরু-বাছুর-ছাগল যাতায়াত, বন্যার কারণে ট্রেন লাইনের ক্ষতি হওয়া, সিগনাল ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ইত্যাদি কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'রেলের আধুনিকায়ন অতি জরুরি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদের রেল ব্যবস্থাকে তুলনা করতে হলে ডিজিটালাইজেশনের কোনো ব্যতিক্রম হতে পারে না। ট্রেন ব্যবস্থায় যখনই ডিজিটালাইজেশন আসবে তখনই দুর্ঘটনা কমতে থাকবে'।

তিনি আরো বলেন, 'ট্রেন ব্যবস্থায় প্রথমে যেখানে ডিজিটালাইজেশন দরকার তা হলো, ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেমগুলোতে অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন করা। কোনো গাড়ি যদি সিগন্যাল ভায়োলেশন করে অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশনের মাধ্যমে ট্রেন নিজের ব্রেক করে ফেলবে এবং দুর্ঘটনা ঘটবে না। তাছাড়া ট্রেনের চালকদের এখনো লাল, সবুজ বাতি দেখেই সিগনাল পার হতে হয়। ডিজিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনে চলকের সামনে আধুনিক ডিসপ্লে বোর্ড থাকলে সিগনাল সিস্টেমে পরিবর্তন আসবে।

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ট্রেনের মতো নিরাপদ বাহনে দুর্ঘটনা কাম্য নয়। ট্রেন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি এই পুরো সিস্টেমটা চালানর জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে ট্রেন দুর্ঘটনা অনেক অংশেই কমে যাবে'।

 
বিজ্ঞাপন