দূরের কিংবা কাছের যেকোনো যাত্রায় নিরাপদ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ট্রেন যাত্রা। সময়ের সঙ্গে ট্রেনে চলাচল করা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালু করছে। তবে বেড়েছে শুধু ট্রেনের সংখ্যা, রেলপথ সংস্কার থেকে শুরু করে গোটা ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি পাল্টে দিয়েছে প্রেক্ষাপট।
নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিতে ব্যর্থতাসহ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা দৃষ্টিগোচর হয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতায়াত করা যাত্রীরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক এবং ডিজিটালাইজেশন করা হলে কমতে পারে রেল দুর্ঘটনা।
এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সংখ্যক ট্রেনে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মেশিনের মাধ্যমে টিটিরা বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রী থেকে খুব সহজেই জরিমানা আদায় করতে পারবেন। এমনকি কত টাকা জরিমানা আদায় করা হলো সেটাও অটোমেটিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে দেখানো হবে। মূলত এটি ডিজিটালাইজেশনের একটি ধাপ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০১৯ সালের বার্ষিক রেল দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যও ছিল বেশ শঙ্কার। গেল বছর রেলপথে ৪৮২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত, ৭০৬ জন আহত হয়েছে।
সম্প্রতি ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা রোধে রেল ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া চলমান। তাছাড়া রেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের আরও সচেতন করার জন্য বিভিন্ন মোটিভেশনাল কাজও চলছে।
মূলত ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে রেল ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন করার প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেন রেলমন্ত্রী।
এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, 'রেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ট্রাক, কোচ, ব্রিজ ইত্যাদি মেইনটেন্যান্স অভাব। এ ছাড়া অবৈধ লেভেল ক্রসিং গেট দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, ইঞ্জিন বিকল হওয়া, ট্রেন থেকে যাত্রী লাফ দেয়া, রেল লাইন ভেঙে যাওয়া, টেলিফোন ব্যবস্থার অচলাবস্থা, লাইনের পয়েন্ট ফেটে যাওয়া, ট্রেন পার্টিং লাইনচ্যুতি, রেলগাড়ির ক্ষতির কার্যক্রম করা, লাইনের ওপর দিয়ে গরু-বাছুর-ছাগল যাতায়াত, বন্যার কারণে ট্রেন লাইনের ক্ষতি হওয়া, সিগনাল ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ইত্যাদি কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে।
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'রেলের আধুনিকায়ন অতি জরুরি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদের রেল ব্যবস্থাকে তুলনা করতে হলে ডিজিটালাইজেশনের কোনো ব্যতিক্রম হতে পারে না। ট্রেন ব্যবস্থায় যখনই ডিজিটালাইজেশন আসবে তখনই দুর্ঘটনা কমতে থাকবে'।
তিনি আরো বলেন, 'ট্রেন ব্যবস্থায় প্রথমে যেখানে ডিজিটালাইজেশন দরকার তা হলো, ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেমগুলোতে অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন করা। কোনো গাড়ি যদি সিগন্যাল ভায়োলেশন করে অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশনের মাধ্যমে ট্রেন নিজের ব্রেক করে ফেলবে এবং দুর্ঘটনা ঘটবে না। তাছাড়া ট্রেনের চালকদের এখনো লাল, সবুজ বাতি দেখেই সিগনাল পার হতে হয়। ডিজিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনে চলকের সামনে আধুনিক ডিসপ্লে বোর্ড থাকলে সিগনাল সিস্টেমে পরিবর্তন আসবে।
যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ট্রেনের মতো নিরাপদ বাহনে দুর্ঘটনা কাম্য নয়। ট্রেন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি এই পুরো সিস্টেমটা চালানর জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে ট্রেন দুর্ঘটনা অনেক অংশেই কমে যাবে'।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বেশ কিছু প্রকল্প অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে শেষ হবে, তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা যেন পূর্ণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি অপচয় রোধ করতে হবে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সভাকক্ষে বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পসমূহের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চলমান প্রকল্প অব্যাহত থাকবে, সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে রদবদল ও সংস্কার করার প্রয়োজন হলে তা করতে হবে। প্রকল্প যেন নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রকল্প যুগোপযোগী ও কার্যকর করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তাবনা, নতুন নতুন ধারণা এসেছে সেগুলোকে চলমান প্রকল্পের সাথে কিভাবে সমন্বয় করা যায় তা দেখা হচ্ছে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ডাটা সেন্টারের ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয়ে গিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ডাটা সংরক্ষণ করতে চায় এটা করা গেলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আয় বাড়বে।
সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন দফতর, সংস্থা ও এজেন্সির প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালক/উপ-প্রকল্প পরিচালক নিজ নিজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা, সমস্যা ও সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।
পেশাদার সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা, নির্যাতন-নিপীড়ন প্রতিরোধ, দলীয় লেজুরবৃত্তিহীন পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক সাংবাদিকদের শপথ গ্রহণে বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি (বিএসসি) নামে নতুন একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
মিনি কক্সবাজার খ্যাত ঢাকার দোহারের মৈনটে ৬৪ জেলা থেকে আগত দুদিন ব্যাপী সাংবাদিক মিলনমেলায় এর যাত্রা শুরু হয়েছে।
এর আগে, আগতরা তাদের বক্তব্যে বিভিন্ন জেলার বেহাল চিত্র তুলে ধরে লেজুরবৃত্তিহীন সংগঠনের গুরুত্ব তুলে মতামত দেন৷
সোমবার (২১ অক্টোবর) সংগঠনের প্রকাশিত আহবায়ক কমিটির তালিকায় দেখা যায়, একুশে টিভি ও জনকণ্ঠ প্রতিনিধি এম এ রায়হানকে আহবায়ক ও সময় টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি আলপনা বেগমকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটির ৯ যুগ্ম আহবায়করা হচ্ছেন, আফজাল হোসেন (এনটিভি), শাহআলম শাহী (চ্যানেল আই), গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু (প্রতিদিনের বাংলাদেশ), হাবিব সরোয়ার আজাদ (যুগান্তর), আজহারুল হক (প্রথমআলো), মোঃ কামাল উদ্দিন (বৈশাখী টেলিভিশন), হায়দার হোসাইন (বাসস), এম এ আকরাম (নয়াদিগন্ত) ও সোহাগ আরেফিন (দৈনিক দেশবাংলা)।
সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন অনুসন্ধানী সিনিয়র সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন, প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী ও কাজী মিরাজ।
এ আহবায়ক কমিটি আগামী তিন মাসে বৃহত্তর ১৯ জেলায় আঞ্চলিক কমিটি গঠন করাসহ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করবে।
আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রাক্কালে দুই শতাধিক সাংবাদিককে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। শপথ পাঠ করিয়েছেন, প্রথম আলো বন্ধু সভা জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান রওশন। তাকে নবগঠিত বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি (বিএসসি)’র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
মিনি কক্সবাজার খ্যাত দোহারের (ঢাকা) মৈনট ঘাটে আয়োজিত সাংবাদিকদের মিলনমেলায় দলবাজিমুক্ত, সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক সাংবাদিকতার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, একশ্রেণির দলবাজ সাংবাদিকের কারণে গোটা সাংবাদিকতা আজ চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। শোচনীয় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে শুদ্ধ সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়, গণমাধ্যমের প্রতি শতভাগ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাংবাদিকদেরই ভূমিকা নিতে হবে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২৫)কে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার দায়ে স্বামী মহিন উদ্দিন (২৮)কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালত।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এই রায় প্রদান করেন বিচারক আবদুল হান্নান।
মামলায় ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় বাকী ৪ আসামীকে খালাস দেয়া হয়।
মামলার বাদী বাবা হাজী নেয়ামত উল্লা মিজির দেয়া অভিযোগে গেলো ২০১৭ সালে ২ সেপ্টেম্বর রাতে এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে শারিরীক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে তার মেয়েকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করেন। মামলায় ৯ জনের স্বাক্ষী প্রদান শেষে আসামীর উপস্থিতিতে সোমবার এই রায় দেন আদালত।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী স্বামী মহিন উদ্দিন হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে নিহত গৃহবধূ মরিয়ম আক্তার একই উপজেলার মোল্লাডহর মিজি বাড়ির বাসিন্দা। তাদের দাম্পত্য জীবনের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
ময়মনসিংহে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের ধাওয়া খেয়ে ফিরে গেছেন রেলওয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সামনে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকা বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে রেলওয়ে পুলিশসহ এস্কাভেটর দিয়ে মসজিদের প্রবেশ দ্বারে দোকান ভাঙ্গা শুরু করেন। তবে ওই স্থানটি এর আগের উচ্ছেদ অভিযানের সময় ভাঙ্গা ছিল। সেখানে কোনো দখলদারও ছিল না। এ সময় কয়েকজন মুসল্লি মসজিদের ক্ষতি হবে বলে বাঁধা দেয়। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় এলাকাবাসী। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
এমতাবস্থায় লোকজন এস্কেভেটরের দিকে ইট পাটকেল ছোড়া শুরু করেন। পরে ঢাকা থেকে আসা কর্মকর্তারা ধাওয়া খেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে ভেকু চালককে মারধর করেন বিক্ষুব্ধরা। এ কারনে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায় এবং স্টেশন চত্ত্বর এলাকায় উত্তজনা চলতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। রেলের কর্মকর্তারাও উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমিত হাসান বলেন, মসজিদের পাশের একটি দেয়াল ভাঙার সময় মসজিদের ক্ষতি হবে বলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। এতে দু-পক্ষের মাঝে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে এস্কাভেটর দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এমতাবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে কর্মকর্তারা চলে যান। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।