বাংলা একাডেমির বটতলা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্ধিত অংশ। বৃক্ষ আচ্ছাদিত এই দুই অংশেই কচি পাতাদের প্রাণের উচ্ছ্বাস যেন নেমে এসেছে মাটিতে। শীত এলেই শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি জানান দেয় বসন্ত আসন্ন এবং এই বসন্তকে আরও একটু ভিন্ন মাত্রায় রাঙায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মেলার তৃতীয় দিন। শুরুর সাত দিনে বিগত সময়গুলো মেলায় খুব একটা পাঠক সমাগম দেখা না গেলেও এবার তৃতীয় দিনেই যেন চোখে লেগেছে জনসমাগমের ভিন্ন দৃশ্যপট। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের পদচারণায় দুই অংশের মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো প্রাণোচ্ছল।
স্টল মালিক ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা হলে তারা পাঠক ও লোক সমাগমের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে কথা হয় ২৭৯ নম্বর স্টল সুলেখা লাইব্রেরিতে দায়িত্বরত কামরুল ইসলাম সোহাগের সঙ্গে।
তিনি জানান, বিলম্বে মেলা শুরু হলেও এবার প্রথম দিন থেকেই পাঠক ও লোক সমাগম ছিলো সন্তোষজনক। তৃতীয় দিনে এসে তো মনে হচ্ছে প্রাণ লেগেছে মেলায়। নিজেদের অবস্থান থেকেও বলতে পারি এবার মেলা শুরু থেকেই প্রাণ নিয়ে এসেছে।
একাধিক স্টল মালিক ও প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাবরের মতো তরুণ পাঠকরা ইতিহাস, কথা সাহিত্য, ভ্রমণ ও থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার এবং সাইন্স ফিকশন ঘরানার বইগুলো বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবালসহ হালের তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের মতো লেখকদের বইও খুঁজছেন তারা।
কথা হয় শুধু বই মেলা উপলক্ষে বরিশাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় আসা অঞ্জলী কর্মকারের সাথে। তিনি বলেন, এবার ফেব্রুয়ারির দুই তারিখ ঢাকায় এসেছি শুধু গ্রন্থমেলায় থাকবো, বই কিনবো এই উদ্দেশ্যে। তিনি জানান, বিভিন্ন লেখকের মোট ৭০টি বই কেনার লক্ষ্য নিয়েছি। সময়ের সঙ্গে এই সংখ্যা বাড়বে বরাবরের মতো।
স্টলগুলোতে চোখে লাগার মতো ভীর ছিলো বিকেল থেকেই, সন্ধ্যের পরে রাত বাড়ার সাথে সাথে এই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই গ্রন্থমেলায় এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি মূলত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার মেলায় সব মিলিয়ে ৮১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- পাঞ্জেরী থেকে আলম তালুকদারের ‘রূপকথার আজবকথা’, বাংলা একাডেমি থেকে হারুন-অর-রশিদের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কি ও কেন’, আগামী থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘গান্ধীর দর্শন ও শেখ মুজিবের রাজনীতি’, রফিকুল ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র’, অন্যপ্রকাশ থেকে সাদাত হোসাইনের ‘মেঘের দিন’, অনন্যা থেকে শামসুর রাহমানের ‘উপন্যাস সমগ্র’ অন্যতম।
এদিকে গ্রন্থমেলায় দারুণ আকর্ষণের জায়গা ছিলো ‘লেখক বলছি’ আলোচনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ। আজকে এই মঞ্চে কথা বলেছেন কথাশিল্পী হাবিব আনিসুর রহমান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, লেখক অঞ্জন আচার্য ও শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব। লেখকদের এমন আলোচনা উপভোগ করেছেন মেলায় আগত পাঠক ও দর্শনার্থীরা।