বাংলাদেশিদের আনতে বিশেষ ফ্লাইট যাচ্ছে চীনে

  করোনা ভাইরাস
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চীনের উহান শহরে আটকে পড়া ৩৬১ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট চীনে যাচ্ছে।

দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে এয়ারপোর্টের বিপরীত দিকে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে। সে সময় তাদের সঙ্গে পরিবারসহ কেউই দেখা করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি সংবাদসম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়

মন্ত্রী বলেন, চীনে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া ১৭টি দেশে এই রোগটি ছড়িয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশে এ রোগের কোনো প্রভাব নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন সন্দেহজনকভাবে ভর্তি রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সেটা শেষ হলেই বোঝা যাবে।

মন্ত্রী বলেন, চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রায় ৩৬১ জন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদেরকে অতি দ্রুত ফিরে আনার ব্যবস্থা আমরা করেছি। এখানে যারা ফেরত আসছে আমাদের জানামতে তারা কেউই কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তারপরও তারা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তাদেরকে প্রথমে আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখানে তারা ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে। এসময় তারা পরিবারের সদস্যসহ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।

শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট উহানে বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকেল পাঁচটায় আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সেখানকার উদ্দেশে যাবে। আনুমানিক রাত দুইটার মধ্যে তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশে এই ফ্লাইটটি অবতরণ করবে। এই বিমানেও ৫ জন চিকিৎসক থাকবে যারা সম্পূর্ণরূপে প্রটেকটেড থাকবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সেরের সকল সুযোগ-সুবিধাও থাকবে এই বিমানে। ওই ৩৬১ জনকেও প্রটেকটেড অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এমনকি হজ ক্যাম্পে তাদেরকে আলাদাভাবে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে।

পর্যবেক্ষণের ১৪ দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের এসে দেখা করতে না চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি অনুরোধ করবো কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইবেন না। তারা কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।

সংবাদসম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আত্মীয়স্বজনদের উদ্দেশে বলেন, চীন ফেরত এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করার জন্য যেন উঠে পড়ে না লাগে। সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্তদের কথা শুনে অনেক আগে থেকেই বলছেন বাংলাদেশিদের ফেরত নিয়ে আসতে। এর আগে চীন সরকার আমাদেরকে বলেছিল ১৪ দিনের আগে তাদেরকে ফেরত দেওয়া যাবে না। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় তারা জানিয়েছে তাদেরকে ফেরত দেওয়া সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে ফেরত আনতে। ৩৬১ জনের মধ্যে রয়েছে ১৯টি পরিবার, ১৮ জন শিশু এবং দুটি শিশু রয়েছে যাদের বয়স দুই বছরের নিচে। আমরা খুব অল্প সময়ে সব কিছু প্রস্তুত করেছি। এর থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি আছে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের আনার সিদ্ধান্ত হয়।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, উহানে আমাদের কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই। অন্ধপ্রদেশ গিয়ে সেখান থেকে ওখানে যাওয়া হয়। এই ফ্লাইটটি এখন সরাসরি ওখানে গেলেও যেহেতু উহানে কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে ফ্লাইটের যোগাযোগ বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। তবে আমরা সেখানে মানুষজনকে ভ্রমণে যেতে অনুৎসাহিত করছি। কিংবা যারা আসছেন তারা আসার পরে বিমানবন্দরে নিয়মিত চেকআপ করছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনার জন্য অবস্থান করছে। এর মধ্যে উহানে ২২টি ইনস্টিটিউটে আমাদের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। সেখানকার সবাই আবার আসতে চায়নি। এদের মধ্যে যারা শুধু আসতে চলেছে তাদেরকেই আমরা আনার ব্যবস্থা করেছি।

এসময় সংবাদসম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আশাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল কালাম আজাদ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা।