শ্রদ্ধাভরে কথাশিল্পী শওকত আলীকে স্মরণ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর স্মরণসভা

কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর স্মরণসভা

বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত আলীর স্থান চিরস্থায়ী, এতে নতুন ধারা সৃষ্টিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনরা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান হলে কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গণপ্রকাশন এক স্মরণসভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

শওকত আলীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, তিনি আমাদের মধ্যে বিশিষ্ট, এটা সর্বজনস্বীকৃত। তিনি অল্প কথা বলতেন, কিন্তু কথাসাহিত্যে তার স্থান চিরস্থায়ী। আজকে যখন তিনি নেই তখনও তার রচনা সমাদর লাভ করছে। তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বাংলাদেশের মানুষর শ্রদ্ধাভরে সবসময় স্মরণ করবে।

তিনি বলেন, শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন একটি অসাধারণ উপন্যাস। তিনি সেই উপন্যাসে নতুন ভাষা নির্মাণ করেছেন, পুরাকালের ভাষার আশ্রয়ে। এমনিভাবে তার অন্য প্রতিটি উপন্যাসে সেই সময়ের রাজনীতি, সমাজনীতি এবং মানুষের জীবনে কেমন প্রভাব পড়েছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে।

শওকত আলীর সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বয়সে তিনি আমার থেকে এক বছরের বড় কিন্তু আমরা একই সময়ে এসএসসি পাশ করেছি। তার অল্প কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে আমি একজন। তিনি সবসময় স্বল্পভাষী ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, শওকত আলীর লেখার মধ্য দিয়ে আমরা এ দেশের মানুষের লড়াইয়ের সময়কালকে জেনেছি। তার লেখনী শুধু কথাসাহিত্য নয়, ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে আমাদের সামনে। শওকত আলীর অনুপম ভাষা, লেখনী শৈলী মানুষকে আকৃষ্ট করে অত্যন্ত দারুণভাবে।

সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘৪৭ পরবর্তী দেশভাগের সময় যে নতুন সাহিত্যধারার সূচনা হয়েছিল তার অন্যতম স্রষ্টা শওকত আলী। সেই সময়ে আমাদের লেখকরা ৫০ দশকের পরে নতুন ধারায় প্রবাহিত করেছেন বাংলাদেশের সাহিত্যধারাকে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নতুন সাহিত্যধারা সৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত যারা কথাসাহিত্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন কথাশিল্পী শওকত আলী তাদের মধ্যে অন্যতম।

শওকত আলীর পুত্র আসিফ শওকত কল্লোল বলেন, বাবা নেই কিন্তু তার লেখা নিয়ে দেশে-বিদেশে গবেষণা হচ্ছে। তার মৃত্যুর পর এখন খুঁজে পাচ্ছি শওকত আলীর রচিত কবিতা, বিষয়ভিত্তিক নানান গবেষণা ও লেখা।

স্মরণসভায় শওকত আলীকে নিয়ে আলোচনা করেন লেখক মোস্তফা আহমেদ মোরশেদ। আরও বক্তব্য দেন নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল রবিউল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণপ্রকাশনের পরিচালক মাহমুদুল হাসান মানিক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলা কথাসাহিত্যের অমর এই লেখকের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জে। দেশভাগের পর তিনি দিনাজপুরে বসবাস শুরু করেন। তার প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় কলকাতার ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকায়। এর পর দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা ও শিশুতোষ রচনা প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘পিঙ্গল আকাশ’ প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয়েছে ‘ওয়ারিশ’, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, ‘উত্তরের খেপ’সহ কয়েকটি কালোত্তীর্ণ গ্রন্থ। সাহিত্যে অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শওকত আলী পেয়েছেন বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক পুরস্কার।