প্রাণঘাতী উদ্ভিদ ‘ধুতুরা’

  • মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধুতুরা ফল, ছবি: বার্তা২৪.কম

ধুতুরা ফল, ছবি: বার্তা২৪.কম

শৈশবে ধুতুরার কাঁটাওয়ালা ফল তুলে বন্ধু বা বান্ধবীর চুলে লাগিয়ে দিয়ে আনন্দ করতেন অনেকে। কেউ কেউ কাঁচা ধুতুরা গোটা শূন্যে ছুড়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে ‍পৃষ্ঠ দিয়ে ঠেকিয়ে বীরত্ব প্রকাশ করতেন। সেই ধুতুরা এখন আর তেমন দেখতে পাওয়া যায় না, আর সেসব খেলাও আর নাই।

ধুতুরা নামে সবাই চিনলেও এর আরও কিছু নাম আছে। একে রাজধুতুরা, রাজঘণ্টা, ঘণ্টাপুষ্প কিংবা কণ্টফলও বলা হয়। মূলত এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে এমন নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে Devils Trumpet বলে। ধুতুরার ফলকে বলা হয় Thorn Apple।

বিজ্ঞাপন

ধুতুরা বাংলাদেশ ভারতের পথে-ঘাটে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত স্থানে জন্মে। আগে যত্রতত্র দেখা গেলেও বর্তমানে এর দেখা পাওয়া যায় না। কাউকে কাউকে শোভাবর্ধক হিসেবে ধুতুরা গাছকে বাগানে লাগাতে দেখা যায়। Solanaceae গোত্রের উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Dutura metel.

ধুতুরা বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ উচ্চতায় ২-৬ ফুট লম্বা হয়। এর পাতা সরল, ডিম্বাকার ও খাঁজকাটা। ফুল সম্পূর্ণ, বড় ও এককভাবে ফোটে। ফুল ঘণ্টাকৃতির সংযুক্ত ৫টি বৃতি ও দল থাকে। পাপড়িগুলো পরস্পর সংযুক্ত হয়ে ফানেলের আকার ধারণ করে। ফল গোলাকার, অমসৃণ ও কণ্টকিত। শুকনো ফল সমান চারভাগে ফেটে যায়।

ধুতুরা ফল, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কথায় আছে ধুতুরা গোটা খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। এর পাতা, কাণ্ড, ফুল, ফল সবই আগাগোড়া বিষাক্ত। এতে আছে বিপজ্জনক মাত্রার Tropane Alkaloids নামক বিষ। এর বিষক্রিয়ায় পশু-পাখি কিংবা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয়। ধুতুরার বীজ অজ্ঞান পার্টির কাছে খুবই জনপ্রিয়। এর বিষক্রিয়ায় ২/৩ দিন অজ্ঞান থাকতে পারে। কোনো কোনো সময় আক্রান্ত ব্যক্তি কোমায় চলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে।

তিনি আরও জানান, ধুতুরার বিষাক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে পৃথিবীর বহু দেশে এ গাছ লাগানো, বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ধুতুরার কিছু ঔষধি গুণ থাকায় অতীতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় স্বল্পমাত্রায় এর ব্যবহার ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়।

ড. জসীম বলেন, ধুতুরা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এটি বিষাক্ত হলেও পরিমিত ডোজে জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ হিসেবেও কাজে লাগতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা খাওয়া উচিত না।