আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ফেনী সবজির আড়তে পাইকারিতে পটলের কেজি ৪০ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। বেগুন পাইকারিতে ৫৫ টাকা, খুচরা বাজারে ১০০ টাকা। আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে দামের এমন বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।

আড়ত থেকে খুচরা বাজারের দূরত্ব আধা কিলোমিটার হলেও পরিবহন খরচ ও অন্যান্য ব্যয় দেখিয়ে পাইকারি দর থেকে দ্বিগুণ বা তার বেশি বাড়িয়ে মনগড়া দামে বিক্রি করা হয় খুচরা বাজারে।

বিজ্ঞাপন

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি দর থেকে পণ্যভেদে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ টাকা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করার কথা থাকলেও অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দুপুরে কম দামে আড়ত থেকে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি কেবল খুচরা বাজারে মনগড়া দামই একমাত্র সমস্যা নয়, আড়তে সবজির ওজনে হেরফেরও সবজির দাম বৃদ্ধির একটি কারণ।

আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী তরকারি আড়ত থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ফেনী বড় বাজার, পৌর হকার্স মার্কেটে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ কিংবা তার বেশি দামে বিক্রি করা হয় পণ্যগুলো। দামের এ অস্বাভাবিক পার্থক্য প্রায় সব ধরনের শাক সবজিতে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আড়তে ট্রাকে করে বেপারীরা পণ্য নিয়ে আসে। বেপারীরা যে দর ঠিক করে দেয় সে অনুযায়ী বিক্রি করতে হয়। এতে ১০০ টাকায় সাড়ে ৫ টাকা কমিশন পাওয়া যায়। তবে যে দাম কৃষকরা দেয় তার থেকে অল্প লাভে পাইকারিতে বিক্রি করা হয়। খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু পণ্য ২০ টাকা লাভ করার কথা।

খুচরা বাজারে দামের তারতম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, সবজি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আনতে গাড়িভাড়া, লেবার খরচ, পলিথিনের ব্যাগ কেনার খরচ, জায়গা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ আরও অনেক খরচ থাকে। এসব খরচ তুলে লাভ করতে হলে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।

এ ব্যাপারে আব্দুর রহিম নামে ফেনী বড় বাজারের একজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ৩০ টাকা দিয়ে কিনলে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা খরচ করতে হয়। বিক্রির সময় অনেক ক্রেতা খুচরা টাকা কম দেয়, বস্তা কিনলে তার মধ্যে ৫ থেকে ৭ কেজি নষ্ট থাকে। গাড়িভাড়া, লেবার খরচ সব মিলিয়ে হিসাব করেই দাম নির্ধারণ করতে হয়। যার জন্য দাম পাইকার বাজার থেকে বেশি রাখতে হয়।

এ বিষয়ে ফেনী পৌর তরকারি আড়তের শাহজাহান বাণিজালয়ের সত্ত্বাধিকারী শাহজাহান ওমর বলেন, খুচরা পর্যায়ে দোকনদাররা পাইকারি দাম থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা বিক্রি করতে পারে। সবজির দাম বেপারী যে দর দিয়ে যায় সকাল ১০টা পর্যন্ত একদরে বিক্রি হয়, দুপুরে একদর বিকালে অন্যদরে বিক্রি হয়।কারণ এটি পচনশীল হওয়ায় ধরে রাখা যায় না।

ফেনী পৌর তরকারি আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবু জাফর বলেন, আড়তে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় কোটি টাকার বেচাবিক্রি হয়। যা থেকে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ ২০ হাজার, সর্বনিম্ন ৫ হাজার লাভ হয়। বেপারীদের থেকে নগদ টাকায় সবজি কিনতে হয়। আড়তে কোন পণ্য ধরে রাখা যায় না, কম দামে হলেও ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে খুচরা বাজারে মনিটরিং বেশি প্রয়োজন যাতে ১০ টাকার বেশি লাভ না করতে পারে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কাওছার মিয়া বলেন, কাঁচাপণ্যর বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে কৃষি বিপণন অফিস। জেলা মার্কেটিং অফিসার যা তদারকি করেন। শাক-সবজির ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার আইনে ধারা অনেক কম। তবে অনেক বাজারে সকাল বেলা ভালো মানের পণ্য কিনে আনে যারা একটু বেশি দামে বিক্রি করে তবে অর্ধেকের বেশি দামে বিক্রি করা আইনগত ভাবে অপরাধ।

তিনি বলেন, কম দামে কিনলে কমে বিক্রি করতে হবে। তবে কাঁচা পণ্য পচনশীল হওয়াতে এ ব্যবসার সাথে জড়িতরা লাভ ও বেশি করতে পারে আবার কোন কারণে গাড়ি সময়মত না পৌঁছালে অনেক লোকসান গুণতে হয় তাদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় ,খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকায়। তবে পাইকারি বাজারে এলসি মরিচ (পচনশীল) বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা দুইটি একসাথ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে এমন তথ্য জানিয়েছেন একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী।

অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে পটল পাইকারিতে ৩০ টাকা, খুচরা বাজারে ৭০ টাকা, পেঁপে পাইকারিতে ১৫ টাকা খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা, লতি ও কচুর চড়া পাইকারিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে তা ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেগুন পাইকারিতে ৫৫ টাকা খুচরা বাজারে ১০০ টাকা, টমেটো পাইকারিতে ১৫০ টাকা খুচরা বাজারে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, আলু পাইকারিতে ৪৭ টাকা খুচরা বাজারে ৫৫ টাকা, লেবু প্রতি পিচ পাইকারিতে ৫ টাকা খুচরায় ১০ টাকা, আকরি পাইকারিতে ৬০ টাকা খুচরায় ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও পাইকারিতে মুলা ৫০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, কাঁচা কলা ৫০ টাকা, সিম ১৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৪০০ টাকা, পেঁয়াজ ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা পাইকারি বাজার থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল।