ঝুলে থাকা ৩৫ লাখ মামলার জট নিয়ে পুলিশের ক্ষোভ

  • শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ/ছবি: বার্তা২৪.কম

র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ/ছবি: বার্তা২৪.কম

আদালতে পড়ে আছে রহস্য উদঘাটন না হওয়া ৩৫ লাখ মামলা। এসব মামলার নিষ্পত্তিও করছেন না আদালত। দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকায় নষ্ট হয়ে যায় এসব মামলার আলামত। পরবর্তীতে এর দায়ভার বহন করতে হয় পুলিশকে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে এসব ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

দ্রুতগতিতে মামলার নিষ্পত্তি করা গেলে এসব আলামত নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। পাশাপাশি দিন শেষে এসব মামলার দায়ভার পুলিশের কাঁধে এসে বর্তায়। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্রুত গতিতে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সভায় র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, মানুষ কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় ঘোরে, বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে যথা সময়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মামলা ঝুলে থাকায় জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। যা কিনা প্রথমত পুলিশের ওপরেই এসে বর্তায়। ১৪ লাখ ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা এখন দাঁড়িয়ে ৩৫ লাখে। এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার। এজন্য আইন মন্ত্রণায়ের সঙ্গে সমন্বয় থাকা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দরকার প্রসিকিউশন ও জুডিশিয়ারি। এ দুটির কোনোটাই স্বরাষ্ট্রে নাই। তাহলে মামলা জট কমাতে রিভিউ কমিটির কাজটা কি? একজন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন ৩০০ মামলার শুনানি দেন। কিন্তু একজন জজের পক্ষে তা হচ্ছে? আর আইনজীবি নতুন ডেট দিলেই তো পয়সা। যতো ডেট ততো পয়সা।

আইন বলছে প্রথম সাক্ষী হাজির করলে টাকা পাবে। কিন্তু সাক্ষী হাজির করতে হয় পুলিশকে। সে সাক্ষীকেও কেউ নেয় না। আবার সাক্ষী নিরুৎসাহিত হলে দোষ যায় পুলিশের ওপর।

মামলার আলামত ও জব্দ তালিকা কোথায় রাখবো? নিম্ন আদালতে তো পিপি কিংবা কোর্ট সাব ইন্সপেক্টরের তো কোনো কার্যালয় নেই। তাহলে এসব কোথায় রাখবে সিডি ডকেট, জব্দ তালিকা ও আলামত। অথচ এসবের পরে অনেকের জীবন মৃত্যু নির্ভর করে। কিছু মিসিং হলে দায় কি তবে পুলিশের? এসবের সমাধান হওয়া জরুরি।

একেকটা মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ বছর। সেই মামলার আলামত কোথায় থাকবে। নিয়ম অনুযায়ী এসব আদালত তার মাল খানায় মজুদ রাখবে। কিন্তু কয়টা কোর্টের মালখানা আছে? এক লাখ মামলার ২টা করে পৃষ্টা হলেও তো ২ লাখ আলামত হয়ে যায়।

র‌্যাব ডিজি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ হচ্ছে বাংলাদেশে ন্যাশনাল শক অ্যাবজরভার। যতো দোষ পুলিশের ওপরে চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে কারা করছে? আসলে গোড়ায় হাত না দিয়ে কমিটির পর কমিটি বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।

মাদকের মামলা, আইসিটি, নারী নির্যাতনের মামলা মেয়াদ নির্ধারিত। তাহলে আমাদের ওপর তো মামলা প্রলম্বিত হচ্ছে না। রায়ে কেন তবে দেরি হয়। সেখানে সময় নির্ধারিত নেই। মূলতবি মামলার অন্য গুরুত্ব আছে।

এসব ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দিন শেষে সবার নজর থাকে পুলিশ কী করেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করলো। আমরাও অনেক রকমভাবে তৈরি হচ্ছি। জবাবদিহিতার জন্য পুলিশ প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা ধীরে ধীরে সেই দিকেই যাচ্ছি। সেবার মান যাতে বৃদ্ধি করতে পারি সেজন্য সব ধরনের পুলিশ গড়ে তোলা হয়েছে।

মামলার জট নিয়ে কথা বলবো। এটা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করবো। নতুন কিছু যোগ করা যায় কিনা দেখা যাবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।