কারিগরি শিক্ষার্থীদের হাজার কোটি টাকার উপবৃত্তি দিবে সরকার

  • রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ অত্যন্ত অপরিহার্য। জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে কারিগরি খাতের মানোন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। এতদিন প্রকল্পের আওতায় কারিগরি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হলেও চলতি বছর থেকে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে তাদের উপবৃত্তি দিবে সরকার।

কারিগরি শিক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রায় হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর ধাপে ধাপে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এতদিন ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত ১৬২টি (সরকারি ৫৩ ও বেসরকারি ১০৯) প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও সংক্ষিপ্ত কোর্সের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হত। যেটি ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ হলেও সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি যেন বন্ধ না হয় তার জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ দিবে সরকার।

উপবৃত্তির প্রকল্প বদলে হবে কর্মসূচি

চলমান ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার এনরোলমেন্টের হার প্রায় ২৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এনরোলমেন্টের হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এখনো প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাকি।

কিন্তু তার আগেই দাতা সংস্থার অর্থায়নে যে প্রকল্পের আওতায় কারিগরি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হতো তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার্থীদের উপবৃ্ত্তি নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করতে সরকার এবার নিজস্ব অর্থায়নে উপবৃত্তি প্রদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সে লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ শীর্ষক’ প্রকল্প গ্রহণ করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে সরকারের ব্যয় ধরা হয় ৯৫৭ কোটি ২১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৩৮৯টি সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যাতে করে ৬ লাখ ৭ হাজার ৩৯২ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি, ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫২ জন শিক্ষার্থীকে বই ক্রয়ে সহায়তা করা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সাত হাজার ৬৬৩টি বায়োমেট্রিক ডিভাইস ও ১টি জিপ গাড়ি ক্রয়ের কথা আছে।

গেল বছর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে ২১ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জারি হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যবিবরণী।

কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, কর্মসূচির আওতায় এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাসে ৩০০ টাকা, ডিপ্লোমা বা এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের ৫০০ টাকা করে সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের শতভাগ বৃত্তি এবং ছেলেদের ৭০ শতাংশকে উপবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসারও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

প্রকল্পটি মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হলেও সেটি উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন না করে প্রত্যাহার করা হয়। বরং প্রকল্প হিসেবে উন্নয়ন বাজেট থেকে বাস্তবায়ন না করে কর্মসূচি আকারে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সভায় নেওয়া হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বেশকিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাহিদা দেওয়া ছিল। সে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন, শিক্ষাভাতা, ভ্রমণভাতা, চিকিৎসাভাতা, টিফিনভাতা, উৎসবভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ক্রয়, বায়োমেট্রিক ডিভাইস স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল।

বিষয়টি একনেক সভায় উপস্থিত একাধিক সচিব প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। একনেক সভা সূত্রে জানা যায়, ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ উপবৃত্তি’ শীর্ষক প্রকল্পটি টেবিলে উত্থাপিত হলে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একপর্যায়ে অর্থসচিব প্রকল্পটির কিছু নেতিবাচক দিক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। অর্থসচিবের সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রকল্পটির নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে স্ব স্ব যুক্তি তুলে ধরেন। যা একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সানন্দে গ্রহণ করেন। পরে তিনি তা উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন না করে রাজস্ব বাজেট থেকে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, একনেক সভা থেকে প্রকল্পটি উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বাদ দিয়ে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কেন কর্মসূচি হিসেবে নেওয়া হলো জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশন সচিব নূরুল আমিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প হলে পিডি নিয়োগ, জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় করতে হতো। কর্মসূচি আকারে বাস্তবায়ন করলে সে সবের আর প্রয়োজন হবে না বরং সচিবের তত্ত্বাবধানে সরাসরি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে। এটি তাদের জন্যই ভালো হয়েছে। প্রকল্প থাকলে সেটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কর্মসূচি হওয়ায় এটি এখন চলতেই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে আরও অনেক বেশি শিক্ষার্থী কারিগরি খাতের দিকে আকৃষ্ট হবে। যেটি কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।