প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌমাছি চাষে ঘুচবে বেকারত্ব

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সরিষা ফুলে মধু নিতে মৌমাছি/ ছবি: বার্তা২৪.কম

সরিষা ফুলে মধু নিতে মৌমাছি/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলার প্রকৃতির অপরূপকে আরো শোভিত করে ফুল সরিষা। হলুদ সৌন্দর্যে মধুময় শোভা ও হালকা মিষ্টি গন্ধে মন কারে সবার। বাংলার মন মাতানো এই ফুলের সমারোহ দেখা যায় ঢাকার ধামরাইয়ে। যে দিকে দু চোখ যায় শুধু হলুদে সাজানো সরিষার মাঠ।

বিজ্ঞাপন

শীতকালে লাভের আশায় কৃষকরা চাষ করে অল্প সময়ে ফলনশীল সরিষা। এই সরিষার ফলন বাড়ে পরাগায়নের মাধ্যমে। যা পূরণ করে বাক্স পদ্ধতিতে মধু চাষ করে ভ্রাম্যমাণ মৌয়ালরা। তারা সরিষা ক্ষেতের পাশে সারি সারি সাজিয়ে রাখে মৌমাছিসহ মৌ চাষের বাক্স। এতে এক দিকে যেমন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। অন্য দিকে সরিষা চাষিরা পাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বেশী ফলন।

সরিষা ক্ষেতে বাক্স পদ্ধতিতে মধু চাষ

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্টনগর, ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরিফবাগ, সানুড়া ইউনিয়ন, মৈসাসি ইউনিয়নের বিসিক ও ভাড়ারিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক হাজার বাক্সে ৬টি স্থানে পৃথকভাবে মধু চাষ করছে মৌয়ালরা। প্রতি বক্স থেকে সপ্তাহে ৪ থেকে ৮ কেজি করে মধু সংগ্রহ করছে মৌ চাষিরা। তাদের উৎপাদিত মধু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় উৎপাদনের স্থান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে এখানে মধু চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থীরাও ২ কেজি কিংবা ৩ কেজি করে মধু খুচরা দাম ৫০০ টাকায় কিনছেন।

সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী করিম বলেন, এতো দিন লোক মুখে শুনেছি যে বাক্সে করে মৌমাছি চাষ করে মধু সংগ্রহ করে মৌয়ালরা। কিন্তু আজ নিজ চোখে দেখলাম, দেখে খুব ভালো লাগল। এখানে বাক্স থেকে কিভাবে মধু সংগ্রহ করে তা খাওয়ার উপযোগী করে তা দেখে ২ কেজি মধু কিনেছি। একেবারে নির্ভেজাল মধু তাই লোভ সামলাতে পারলাম না।

মধু সংগ্রহ করছেন মৌ চাষিরা

আরেক ক্রেতা তপু বলেন, এখানে সব নিজের চোখে দেখে মধু কিনলাম। মধু অত্যন্ত ভালো। আগে খেয়ে দেখেছি, আসলে এখানকার মধু খেয়ে মধুর আসল স্বাদ পেয়েছি। খাওয়ার পর অনুভব করলাম আসলে মধু তো মধুই।

মধু চাষি মোয়াজ্জেম হোসেন বার্তা২৪.কম’কে জানান, ২০১৫ সালে মধু চাষের ইচ্ছা হয় তার। পরে ২০১৬ সালে দুইটা বক্স কিনে প্রশিক্ষণ ছাড়াই মৌমাছি চাষ শুরু করেন। কিন্তু ৩ মাসের মধ্যে ওই দুই বক্সের মৌমাছি মারা যায়। হতাশ না হয়ে আবার চারটি বাক্স কেনেন। পরে সেখান থেকে ভাল পরিমাণ মধু সংগ্রহ করেন। তবে মধু সংগ্রহকালীন পরবর্তী সময়ে কিভাবে মৌমাছি সংরক্ষণ করতে হয় তা জানা না থাকায় ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আবার ১১ বাক্সের সব মৌমাছি মারা যায়। পরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য সাতক্ষীরার আব্দুল আজিজের কাছে যান। সেখানে ৪ মাস কাজ করেন। কাজে খুশি হয়ে আজিজ তাকে ছয়টি বক্স দেন। আজ তার কাছে ৫৪টি বক্স। শীতকালে প্রতিমাসে প্রায় এক হাজার কেজির বেশি মধু সংগ্রহ করেন। যার মুল্য প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সরিষা ফুলে মধু নিতে মৌমাছি

তিনি বলেন, আমাদের দেশ অনেক ছোট তাই চাকরির পরিধিও কম। সেজন্য চাকরি খোঁজার চেয়ে উদ্যোগ নিয়ে কিছু করলেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। যদি কেউ মধু চাষে আগ্রহী হয়ে তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে চায় তাহলে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, ধামরাইয়ে সরিষা চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ৪ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। কিন্তু চাষের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৪ হাজার ৮২০ হেক্টরে এই সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষায় এক প্রকার পোলেন গ্রীন থাকে ওই পোলেন গ্রীন মৌমাছির পায়ে এবং বুকে লেগে পরাগায়নের সৃষ্টি হয়, ফলে সরিষার প্রায় ১৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। আর মৌচাষিদের তেমন কোন বড় ধরনের পুঁজি লাগে না। তাদের বড় পুঁজি হচ্ছে প্রশিক্ষণ যা আমরা বিভিন্নভাবে মৌচাষিদের দিয়ে আসছি।