ভিজিট ভিসায় দিশেহারা দুবাই প্রবাসীরা

  • শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, দিয়ারা দুবাই থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে দেশান্তরি আরিফুল ইসলাম। ইচ্ছে ছিল পরিবারকে সুখের সন্ধান দেবেন দুবাই গিয়ে। সেই আশায় ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে দুবাইয়ে পাড়ি জমান আরিফুল। ২০১২ সালের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কাজের ভিসা বন্ধ হওয়ায় দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা খরচ করে দুবাই আসেন। আশ্বাস ছিল শ্রমবাজার খুললেই নতুন ভিসা লাগাবেন, কিন্তু আজ অবদি আর খোলেনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। এদিকে ভিজিট ভিসার মেয়াদ শেষ এখন সে অবৈধ শ্রমিক বা ‘খাল্লি বাল্লি’।

আরিফুল ইসলাম

তাই কোথাও স্থায়ী কাজ পাচ্ছেন না। দেশের অন্যান্য প্রবাসীদের সহায়তায় কোথাও কাজ মিললেও নিজেকে লুকিয়ে চলাফেরা করতে হয়। কেননা দুবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই খাটতে হবে জেল, পাঠিয়ে দেবে দেশে। আর একবার দেশে ফিরলেই ‘ইউএই’ দুয়ার বন্ধ। তাই গোপনে কাজ করছেন এরকম লাখ প্রবাসী বাঙালি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দিয়ারা দুবাই এর নায়েব রোডে দেখা হয় কয়েকজন প্রবাসী শ্রমিকের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে নিজেদের দুর্দশার কথা সরকার ও দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেন তারা। তাদের সকলের চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। যার আয়ে পরিবারের সকলের ভাগ্যের চাকা ঘোরার কথা তার চাকাই বন্ধ। কি করবে আগামী দিন এসব কথা বলেন ওই সকল শ্রমিকরা। দুবাই প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন রাঙ্গামাটির সুকুমার বৈষ্ঠবী, শরিয়তপুরের নাসির উদ্দিন ও তারেক আহমেদ, নোয়াখালীর মো. ইয়াকুব আলী, হবিগঞ্জের স্বপন চক্রবর্তী।

সুকুমার বৈষ্ঠবী

তারা সবাই কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে যখন কথা হয়, সকলের একটাই দাবি বাংলাদেশ সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তাদের কথা চিন্তা করে দুবাই সরকারের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত ভিসা জট খুলার ব্যবস্থা করেন।

মো. ইয়াকুব আলী

এদের জীবনচক্র এখন শাখের করাত। একদিকে কাজ পাচ্ছে না আবার যারা আগে কাজ পেয়েছেন তারা মালিক বদলাতে পারছেন না। কেননা মালিক বদলাতে হলেও ওয়ার্ক ভিসা লাগবে। তাই শুরুতে যে বেতনে কাজ করছিলো এখনো সেই একই বেতনে কাজ করছে। কাজ করতে করতে দক্ষ হলেও বাড়ছে না মজুরি।

আর যারা ভিজিট ভিসায় এসে পার্টনারে লাইসেন্স করতে পারছেন তারা হয়তো থাকতে পারছেন কিন্তু তাতে তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়েছে, হচ্ছে। পার্টনার কার্ড মানে দুবাইয়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে চুক্তি করা। তার এই কার্ডের জন্য দুবাই স্থায়ী বাসিন্দাকে বাৎসরিক ফি দিতে হবে, যার কাছ থেকে যা নিতে পারে।

স্বপন চক্রবর্তী, তারেক আহমেদ ও নাসির উদ্দিন

তাতে খরচ পড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা। এমনই একজন শ্রমিক হবিগঞ্জের স্বপন চক্রবর্তী। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি তো ভিজিট ভিসায় আসছিলাম। ভিসা বন্ধ হওয়ার পর এখানে এক আরবীয়কে নিয়ে পার্টনারে লাইসেন্স নিয়েছি, নিজে কোনো কাজ নিতে পারি না। অন্যদের সঙ্গে সাব কন্ট্রাকে কাজ করতে হয়। তাতে মাসে ২০-২২ দিন কাজ থাকে। বাকি দিন কাজ থাকে না, বসে থাকি। যা পাই তা দিয়ে বাসা ভাড়া খাওয়ার টাকা হয়, দেশে পাঠাতে পারি না। দেশে টাকা পাঠাতে না পারলে পরিবার বাঁচবে কিভাবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমাদের ভিসা নবায়ন করার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করুন। আমাদের বাঁচান।

দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ এরকম লাখো প্রবাসী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন, মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যা হয়তো তাদের পরিবারও জানেন না। তাই সাংবাদিক পেয়ে মনের কষ্টের কথা উজাড় করে দেন তারা।