খুলনায় আলাদা দু’টি হত্যা মামলায় আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
এর মধ্যে খুলনার তেরখাদা উপজেলার লস্করপুর গ্রামের রিকশাচালক আবদুল আলী শেখ হত্যা মামলায় সাত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ডুমুরিয়ার ঘের মালিক শাহিন বন্দ হত্যা মামলায় আসলাম সানা ওরফে জলিল সানাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী।
আলী শেখ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-ছলেমান গাজী, হাফিজ খান, জামাল শেখ, শওকত মোল্লা, আকতার শেখ, নেয়ামত শেখ ও মিন্টু ওরফে মন্টু।
অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় এ মামালার পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ফিরোজ গাজী, কামাল, শরিফুল, আবদুল অদুদ ও মাশিকুল ইসলাম চৌধুরী জয়।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক শাহীন জানান, ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় লস্করপুর গ্রামের রিকশাচালক আবদুল আলী শেখকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে ৪ মে বিকেলে ভৈরব নদ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ভাই মিন্টু শেখ বাদী হয়ে ২০০৪ সালের ৭ মে তেরখাদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সেই সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বাকিদের খালাস দেওয়া হয়।
এদিকে আইনজীবীরা জানান, ডুমুরিয়ার বিলপাবলা এলাকায় শাহিন বন্দের মাছের ঘেরে কাজ করতেন আসলাম সানা। ২০১১ সালে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে জলিলকে কয়েকটি চড় মারেন শাহিন। এর প্রতিশোধ নিতে ওই সালের ৬ জুন রাতে ত্রিশুল দিয়ে ঘুমন্ত শাহিনের বুকে আঘাত করেন সানা। এরপর স্থানীয় লোকজন শাহিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে সানাকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ। এরপর শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সানাকে যাবজ্জীবন কারা ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।
দেশের প্রত্যেক পূজামণ্ডপে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাক-ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে ইতোমধ্যে মহাষ্টমী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী । এদিন সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার ‘মহা আরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে।
‘সন্ধিপূজা’শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবী দুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রাণের উৎসবে ভক্তদের মধ্যে বইবে বিষাদের সুর। এদিন সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়ে থাকে মণ্ডপে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তার তিন যোদ্ধা চন্ড, মুন্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় এ দুর্গোৎসবের রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
এবারো কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে কটিয়াদী উপজেলায় একটি পূজা মণ্ডপ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে পূজারীরা দেখার জন্য আসছেন। আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং আধুনিক আলোকসজ্জা ও চিত্রকর্ম এটিকে ফুটিয়ে তুলছে বহুগুণ।
উপজেলার পৌর এলাকায় পূর্বপাড়া সহা পাড়া মহল্লায় যুব সংঘের উদ্যোগে এই পূজাটির আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পূজারিদের ভীড় লেগেই আছে এই মণ্ডপে। কিশোরগঞ্জের আশপাশের জেলা থেকেও অনেকেই আসছে পরিবার নিয়ে পূজা ঘুরে দেখার জন্য৷ এর আধুনিক আলোকসজ্জা ও ডিজাইন মুগ্ধ করে সবাইকে। এর আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে রাতের বেলায়৷ সবগুলো আলোকসজ্জা একসাথে জ্বলে ওঠার পরই সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে। দূর থেকে গেইট দেখলে মনে হয় বিশাল কোন অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক প্রবেস গেইট দৃষ্টিনন্দিত। রুচিশীল যে কাউকে সহজেই মুগ্ধ করবে।
পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী প্রনব সাহা বার্তা ২৪.কম'কে বলেন,‘এটি দেখার পর পুজার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়। পরিবার নিয়ে আসছি কটিয়াদীর পুজা ঘুরতে৷ আমার দেখা সবচেয়ে বড় পূজা এটি।’
শ্যামল চন্দ্র দে নামে আরেক পূজারী বলেন,‘আশপাশের কয়েক জেলার মধ্যে এটি হয়তো সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুজা অনেক গুলো পুজা ঘুরে দেখছি। কিন্তু এই পুজাটা সবচেয়ে অন্যরকম আকর্ষণ মনে হচ্ছে। আমাদের সাথে যারা আসছে সবাই মুগ্ধ হয়েছে দেখার পর৷'
পূজাটির আয়োজক কমিটির সদস্য ও পৌর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুজিৎ সাহা বলেন,'আমরা দূর থেকে কারিগর ও জিনিসপত্র এনে এই পুজা তৈরি করেছি৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এখানে দুর থেকে মানুষ এসে পুজা দেখে মনের মধ্যে তৃপ্তি পায় এবং পুজার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায় এটা আমাদের জন্য সার্থক। ১০ বছর ধরে আমরা সাহা পাড়ার যুব সংঘের পক্ষ থেকে এটির আয়োজন করে আসছি৷'
উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সারদীয় দুর্গাপূজা। পূজামণ্ডপগুলোতে নানা উপকরণ দিয়ে দেবী দুর্গাকে পূজা আর আরধনা করছেন ভক্তরা। ভক্তরা দেবী দুর্গার কাছে সব ধরণের অশুভ শক্তি বিনাশ করে দেশবাসীর জন্য শান্তিকামনা করেন। ঢাকের বাজনা, শঙ্ক আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে । চন্ডিপাঠ আর পূজারমন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছে পূজামন্ডপগুলোতে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পূজারিদের আনাগোনায় মুখরিত মণ্ডপ। সববয়সী নারীপুরুষ আসছেন ঘুরতে। ছোটদের হাত ধরে শিশুরাও আসছে প্রতিমা দেখতে।
পরিবার পরিজনকে সাথে নিয়ে এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপ চলছে ছুটাছুটি। মণ্ডপ গুলোতে চলছে আরাধনা আর ঢুল তবলার সাথে সাথে পূজার আনুষ্ঠানিকতা৷ একসাথে নেচে গেয়ে আনন্দে মেতেছে সবাই। মণ্ডপ গুলোর আশপাশে দৃষ্টিনন্দিত আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ জেলায় সবচেয়ে বেশি ও আকর্ষণীয় পুজা হয় কটিয়াদীতে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ঘুরতে আসেন পুজারীরা। পুজার নিরাপত্তায় রয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়মিত টহল।
জেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুজা হয় কটিয়াদী উপজেলায়৷ এখানে এবার মোট ৩৩ টি পূজা মণ্ডপে পুজা হচ্ছে। এর মধ্যে, পৌর এলাকাতে ১৪টি ও উপজেলায় পূজা মন্ডপ রয়েছে ১৯টি। আগামী ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
অতীতের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করার কথা জানান পূজারী ও আয়োজকরা।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বার্তা২৪.কম'কে বলেন,‘নিয়মিত তদারকি ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’
মা ইলিশ রক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা করে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে ২২ দিন পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত (১৩ অক্টোবর মধ্যরাত) থেকে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ৩ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত।
এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে এবং একই সঙ্গে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতি বছর এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার লক্ষে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনা করে এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
বুধবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গাইবান্ধার সবকটি বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রুপালী ইলিশ। বাজারে আগ্রহ নিয়ে ইলিশ মাছের দাম শুনলেও অধিকাংশ ক্রেতাকে ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। ক্রেতাদের স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করেছে ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম। বর্তমান বাজারে নিম্নবিত্ত তো নয়ই, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয় সাধ্যের বাইরেও এখন এই মাছ। বর্তমানে বাঙালির জাতীয় মাছ ইলিশ এখন উচ্চবিত্তের বিলাসিতা!
সরেজমিনে গাইবান্ধার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাজারের সর্বোচ্চ ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৬০০ টাকা থেকে ১৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিজের দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং সবচেয়ে ছোট আকারের ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ যেটি জাটকা হিসেবে পরিচিত সেটিও কিনতে গুনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
এদিন বাজারে দেখা যায় ইলিশ কিনতে আগ্রহী ক্রেতা থাকলেও ক্রয়ে সাধ্য না থাকায় দাম শুনেই চলে যাচ্ছে ক্রেতারা। কেউ কেউ বাজারের সব থেকে ছোট ইলিশ কিনলেও, দামই করেনি বড় ইলিশের। যারাও ছোট ইলিশ কিনেছেন, তারাও প্রত্যাশার অর্ধেক। তবে দু, একজনকে বড় ইলিশ কিনতেও দেখা গেছে।
ইলিশের দাম কিভাবে, কেন বাড়ে তার সঠিক উত্তর জানেনা গাইবান্ধার স্থানীয় ক্ষুদ্র ইলিশ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি 'আমরা যেরকম দামে ক্রয় করি, সেভাবেই বিক্রি করে থাকি। আমরাতো ইলিশের মূল আড়তে যেতে পারিনা বা যাইনা।' ফলে ইলিশের সিন্ডিকেট সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নেই তাদের।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি, ইলিশের বৈদেশিক চাহিদার প্রভাব ও সরবরাহ সংকটই মোটা দাগে ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধির কারণ। এছাড়া পরিবহন খরচের কারণেও গাইবান্ধায় ইলিশের দাম বৃদ্ধি পায়। আর আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধির কারণেই সাধারণের পাতে উঠছে না ইলিশ মাছ।
গাইবান্ধা শহরের নতুন বাজারের পরেশ মৎস্যআরতের স্বত্বাধিকারী পরেশ চন্দ্র বলেন, 'আমাদের ইলিশের প্রাপ্তিস্থান মূলত পদ্মা, মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে, ইলিশ মাছের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত ঢাকায়। ঢাকায় ইলিশের বড় ব্যবসায়ীরা এর দাম নির্ধারণ করে থাকেন। আসলে গাইবান্ধা থেকে আমাদের কিছুই করার নেই।'
তিনি জানান, 'মাছ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বড় ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করেন। মাছের দাম কমে গেলে বড় বড় ব্যবসায়ীরা কোলেস্টোরেজে মাছ মজুদ করে রাখেন। যার কারণে ইলিশের দাম সারা বছরেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে।'
অন্যদিকে, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে অস্বাভাবিক হারে ইলিশের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে করেন দেশের সচেতনমহল। বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধার সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য মনজুর আলম মিঠুর সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদকের।
এসময় তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের বেশির ভাগ জেলেরা মূলত শ্রমিক। তাদের জাল নেই নৌকা নেই কিন্তু মাছ ধরে। নদী বা সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা ইলিশ স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রির আগে কয়েকধাপ হাত বদল হয়। তাদের মধ্যে বড় সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ইলিশের চাহিদার সময় ও বিষয় মাথায় রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুদ করে সরবরাহে সংকট তৈরি করে। ফলে ইলিশের দাম দ্বিগুণ হয়। এছাড়া বাংলাদেশের ইলিশ বিদেশে রফতানিও একটি বড় কারণ।'
এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'গাইবান্ধা তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষ কৃষি নির্ভর। এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষদের সর্বোচ্চ মজুরী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সেই আয়ে তাদের ইলিশ কেনা দুঃস্বপ্ন। ইলিশ দেশের জাতীয় মাছ হলেও এই মাছ এখন সাধারণের না। ইলিশ এখন এ দেশের ধনী শ্রেণির বিলাসিতার পণ্য।'
শহরের পুরাতন বাজারে বাজার করতে আসা মোসলেম উদ্দিন বলেন, 'কিছু কাঁচা বাজর করে ভাবছি কিছু মাছ কিনবো। ইলিশের দোকানে দেখলাম ছোট সাইজেরও অনেক ইলিশ আছে। তাই দামও করলাম, দাম শুনে কেনা হলোনা।'
এসময় কত টাকা করে কেজি চাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, '৪/৫ টিতে কেজি ইলিশের দামই ৬০০ টাকা। তাই নেয়নি। ভাবছি অন্য মাছ নেব।'
একই বাজারে ইলিশ ক্রেতা মদনের পাড়ার ট্রাক চালক সবুজ মিয়া বলেন, 'স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ বাজার করতে এসেছি। স্ত্রী ইলিশ মাছ কেনার কথা বলেছেন। বাধ্য হয়ে ৬০০ টাকা কেজির চার পিস মাছ নিলাম। কিনতে পারবোনা তাই বড় ইলিশের দামই করিনি।'
এদিন ৯০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ এক হাজার ৪৪০ টাকায় কিনতে দেখা গেছে এক ক্রেতাকে। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। তবে তার পেশা আইন সংশ্লিষ্ট বলে তিনি জানিয়েছেন।
পুরাতন বাজারের ইলিশের ক্ষুদ ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র বলেন, 'আমরা যেরকম দামে ক্রয় করি, সেভাবেই বিক্রি করে থাকি। গাইবান্ধার বাজারে ছোট ইলিশের দাম কম থাকায় চাহিদা বেশি। ফলে ছোট ইলিশের বিক্রিও বেশি। বড় ইলিশ অনেক সময় আমাদের লস (ক্ষতি) করেও বিক্রি করতে হয়।'
গাইবান্ধা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারজান সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ইলিশ মূলত উপকূলীয় অঞ্চলেরর মাছ। তবে বর্তমানে ইলিশ উপকূল ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।'
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রতেও ইলিশ ধরা পড়ছে। গত বছর গাইবান্ধায় ১৭.১৭ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে এবং চলতি বছরের এ পর্যন্ত ধরা পড়েছে ১৪ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ।
গাইবান্ধা সদ্য যোগদান করা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রাশেদ বলেন, '১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম শুরু হবে। এই সময়টাতে নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। দেশে তথা গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোতে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, ইলিশ সম্পদ রক্ষা এবং এর উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্নভাবে আমরা কাজ করছি। নিষিদ্ধ সময়টার জন্য জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।'