ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
ফরিদপুরে মাটি ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বালু ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপ। এরই জেরে মো: ইব্রাহীম শেখ (৪৫) নামে এক বালু ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ইব্রাহীম শেখ ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রামকান্তপুর গ্রামের তেলামুদ্দিনের ডাঙ্গী এলাকার মৃত সামাদ শেখের পুত্র। গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৯ টার দিকে নিজ বাড়ি সংলগ্ন ছনেরটেক ব্রিজ সংলগ্ন ছোট একটি বাজারে ৬-৭টি মোটরসাইকেলের একটি বহর এসে ১০ থেকে ১২ জন যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে শহরের টেপাখোলা বনলতা সিনেমা হলের পেছনে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাছে থাকা ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
২২ জানুয়ারি ( বুধবার) পার্শ্ববর্তী চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমাধবদিয়া আরশাদ মুন্সী ডাঙ্গী গ্রামের শাজাহান ব্যাপারী (৪৫) ও ফয়সাল শেখের (২২) নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত করে কোতয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইব্রাহীম শেখ বলেন, আমার ভাতিজির বিয়ে উপলক্ষ্যে ওই রাতে শহর থেকে বাজার করে বাড়ির পাশে এসে নামা মাত্রই হঠাৎ করে ৬ থেকে ৭ টি মোটরসাইকেল এসে দাঁড়ায়। তাদের কাউকে আমি চিনতে পারি নাই। এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা টানাহেঁচড়া করে একটি মোটরসাইকেলে করে আমাকে নিয়ে যায়। পরে শহরের বনলতা সিনেমা হলের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে বালু ব্যবসায়ী শাজাহান ও ফয়সালকে দেখতে পাই। এরপর ওইখানে থাকা কতিপয় ব্যক্তি চাকু দেখিয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
সম্প্রতি অভিযুক্তদের এলাকায় আব্দুর রব নামে এক ব্যক্তির পুকুর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য স্ট্যাম্পে চুক্তি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তুলে নিয়ে ওই পুকুর তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে ইব্রাহীম শেখ জানিয়েছেন।
ওরা আমাকে বলে, রবের কাছ থেকে যে স্ট্যাম্প নিয়েছিস তা আমাদের ফেরত দিয়ে দিবি। পুকুরের বালু আমরা নেব, তুই নিতে পারবি না। পরে আমি স্ট্যাম্প ফেরত দেওয়ার জন্য রাজি হলে রাত ১২টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, যখন ওরা আমাকে তুলে নিয়ে যায় তখন আমার ভাতিজির বিয়ে উপলক্ষ্যে গরু কেনার জন্য পকেটে ৪ লাখ ২ হাজার টাকা ছিল। আমাকে ভয় দেখিয়ে কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানি শেখ ওহিদ জানান, হঠাৎ করেই কয়েকটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন যুবক এসে কোনো কথা না বলেই ইব্রাহীমকে তুলে নিয়ে যায়। ওরা লোকজন বেশি থাকায় ভয়ে আমি কিছু করতে পারিনি, শুধু দেখছি। পরে মানুষজনকে জানাই।
ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, ইব্রাহীম ভাইকে তুলে নেয়ার পরে টাকা দিয়ে তাকে ফেরত আনা হয়েছে। এরকম ভয়ানক ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। এভাবে যদি একজন মানুষকে তুলে নিয়ে যায় তাহলে এলাকায় থাকা কষ্টকর। আমরা প্রশাসনের কাছে জোড়ালোভাবে দাবি জানাই, এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।
তবে যারা তুলে নিয়ে গেছেন তাদের চিনেন না বলে অভিযুক্ত শাজাহান ব্যাপারী দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি বালুর ব্যবসা করিনা, ব্যবসা করে ফয়সাল। ওইদিন আমারেও তুলে নিয়ে যায় সাক্ষী দেওয়ার জন্য। কারণ, রবের একটি পুকুর থেকে বালু তোলার নামে মিথ্যা কথা বলে ৯ বিঘা জমি থেকে মাটি কাটার জন্য স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে ইব্রাহীম শেখ।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসাদউজ্জামান বলেন, অভিযোগটি এখনও আমি হাতে পাইনি। এরকম হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।