গাইবান্ধায় সূর্যের দেখা নেই দুই দিন, বেড়েছে শীতের প্রকোপ
উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। গতকাল বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। মৃদু বাতাসের সঙ্গে ঘন কুয়াশায় শীতের প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। এতে করে বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালাসহ নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশার মানুষ কাজ বের হচ্ছেন পেটের তাগিদে। গত সোমবার থেকে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা শীত নিজস্ব রুপ নিয়েছে বুধবার। কুয়াশার কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। অন্যদিকে হাসপাতালগুলো বাড়ছে শীত জনিত রোগীর সংখ্যা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াশার সাথে মৃদু বাতাসে জবুথবু অবস্থায় পড়েছে শীতে বিপর্যস্ত মানুষ। বাড়িতে রান্নার চুলার আগুন এবং চায়ের দোকানের চুলায় শীত নিবারণের চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসাথে চায়ের দোকানগুলোতে চায়ের চুমুকে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্থ মানুৃষেরা।
শীত উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা গেছে অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পেটের তাগিদে দিন মজুর, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালাসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা কাজে বের হয়েছেন ঠান্ডা উপেক্ষা করে।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আরিফা আকতার বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভুত হচ্ছে। হিমেল বাতাসে কিছুটা হাত-পা টাটাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। এই শীতে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
অন্যদিকে, জেলার চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সরেজমিনে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, শিশু ও ডাইরিয়া ওয়ার্ডে বাড়ছে নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশি রোগীর চাপ। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। শুধু শিশু ওয়ার্ডে নয় হাসপাতালের আউটডোরেও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বয়সী শিশুদের কোলে নিয়ে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মায়েদের। এছাড়া হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ডাইরিয়া ওয়ার্ডে চার বছরের শিশুর এক অভিভাবক বলেন, গতকাল রাত থেকে হঠাৎ বাচ্চার বমি ও পাতলা পায়খানা। কাল থেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। স্যালাইন চলছে, এখন কিছুটা ভাল হয়েছে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএএমও) ডা.আসিফ উর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, গেল দুই দিনে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্ট নিয়ে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। আমরা তাদের নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছি। এছাড়া আউটডোরেও রোগীর চাপ বাড়ছে। শীতজনিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে বাসি ও ঠান্ডা খাবার পরিহার, একইসাথে গরম কাপড় পরিধানের পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদের শীতে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার উত্তর হরিণ সিংহা গ্রামের আজাহার আলী বলেন, কয়েকদিন থেকেই ধীরে ধীরে বেড়েছে শীত। তবে গত দুই দিন হলো সূর্যের দেখা নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। তার সাথে হালকা বাতাসে চলাফেরা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভাটায় কাজ করা শ্রমিক আবেদ আলী বলেন, আমরা গরীব মানুষ শীত-গরম আমাদের কিছু নেই। একদিন কাজ না করলে চলেনা। শীতে কষ্ট হয় কিন্তু কাজ না করলে খাব কি।
রিকশাচালক কেরামত আলী বলেন, মাঘ মাসের শুরুতেও ঠান্ডা কম ছিল কিন্তু দুইদিন হলো খুব শীত। রিকশা চালানোর সময় শীতের বাতাসে হাত-পা টাটায়। রাতেও অনেক ঠান্ডা লাগে। আমাদের কম্বলের প্রয়োজন।
গেল দুই দিন থেকে বৃদ্ধি পাওয়া শীত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব পরিস্থিতি আরও কঠিন হচ্ছে। এসময় এই এলাকার দরিদ্র-শীতার্থ মানুষের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রায় অর্ধলক্ষ কম্বল জেলার সাত উপজেলার শীতার্থ মানুষের মাঝে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একাধিক মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।