একটি শিয়ালের আতঙ্কে শহরবাসী, কামড়ে আহত ৯ জন
লালমনিরহাট শহরবাসী একটি শিয়ালের আতঙ্কে পড়েছেন। ঐ শিয়ালের কামড়ে দুই দিনের ব্যবধানে ৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ২ দিন ধরে একটি শিয়াল লালমনিরহাট শহরের ব্যস্ততম এলাকা মিশন মোড়, বটতলা মোড় ও পুলিশ লাইন এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। পথচারী দেখলেই হঠাৎ আক্রমণ করে কামড়ে ছিড়ে নিচ্ছে শরীরের অংশ। তাকে তাড়া করলে উল্টো আক্রমণ করছে শিয়াল। জনসমাগম বেশি হলে দৌড়ে ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করছে ।
গত দুই দিনে শহরের ৯ জনকে কামড়ে আহত করেছে শিয়ালটি। যার মধ্যে একজনের অন্ডোকোষ ও একজনের কান ছিড়ে নিয়েছে। একজন শিশুকেও আক্রমণ করেছে শিয়াল। আহতরা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অন্ডোকোষে আঘাতপ্রাপ্ত শ্রমিক নেতা জেমস্ পিটার শচিন ও কানে ক্ষত নিয়ে আহত মোখলেসকে আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ কারণে শহরজুড়ে জনগণের মাঝে শিয়াল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিয়ালটিকে মারতে লাঠি হাতে প্রস্তুত থাকছেন কিছু মানুষ। তবে তাকে কেউে আহত করতে পারেনি। শিয়ালটি পথচারীদের আক্রমণ করেই লুকিয়ে পড়ে পাশের কোন ঝোপ ঝাড়ে। শহরের কুকুরগুলোও তাকে দেখে তাড়ানোর চেষ্টা করলে উলটো কুকুরগুলোকেও আক্রমণ করছে। ফলে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ লাইন সংলগ্ন মোটরসাইকেল মেকানিক্স সাইদুল ইসলাম জানান, তার দোকানের সামনেই একটি শিয়াল আকস্মিক প্রবেশ করে যাকে পেয়েছে তাকেই কামড়ে দিচ্ছে। এ সময় শিয়ালটিকে কুকুর আক্রমণ করতে গেলে উল্টো শিয়ালটিই কুকুরগুলোকে ধাওয়া দিচ্ছে। পরে তিনি ও তার দোকানের কর্মচারী এবং শহরের লোকজন শিয়ালটিকে মারার জন্য ধাওয়া করেও ধরতে পারিনি। পরে চতুর শিয়ালটি লোকজন দেখে লোকালয়ের কোন ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর শিয়ালটি বের হয়ে আবার লোকজনকে আক্রমণ করে। এভাবে অনেক সময় ধরে শিয়ালটি মানুষের সাথে লুকোচুরি খেলা খেলতে থাকে। শিয়ালটি আবার কখন লোকজনকে আক্রমণ করে সেই শঙ্কায় জেলা শহরের মিশন মোড়, সার্কিট হাউজ ও পুলিশ লাইন এলাকার লোকজন আতঙ্কে আছে।
শিয়ালের কামড়ে আহত শ্রমিক নেতা জেমস্ পিটার শচিন ফোনে জানান, জেলা শহরের হাড়িভাঙ্গা থেকে পুলিশ লাইন ও সার্কিট হাউজের সামনে দিয়ে মিশনমোড় যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ কোথা থেকে একটি শিয়াল এসে তাকে আক্রমণ করে। এ সময় শিয়ালটির কামড়ে তার অন্ডকোষের কিছু অংশ ছিড়ে যায়। নিজেকে রক্ষা করতে শিয়ালের সাথে অনেক সময় ধরে যুদ্ধ করতে হয তাকে। পরে একজন পথচারী লাঠি নিয়ে এসে মার দেয়ার পর শিয়ালটি পালিয়ে যায়। এরমধ্যেই তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় বসিয়ে দেয় শিয়লটি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামিরা হোসেন চৌধুরি বলেন, আমাদের এখানে শিয়ালের কামড়ে আহত অবস্থায় চারজন ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে আলিফ নামে একজন শিশুও রয়েছে। আহতদের চিকিৎসার পর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে আশঙ্কা জনক অবস্থায় শচিন ও মোখলেস নামে দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
লালমনিরহাট বন বিভাগের ফরেস্টার মো. মাহবুবুল হক জানান, খাবার সংকট এবং বাসস্থানের অভাবের কারণে হয়ত শিয়ালসহ কিছু বন্যপ্রাণী লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। লোক মারফত জানতে পেয়েছি এখন পর্যন্ত ৯/১০ জন পথচারী শিয়াল কামড়ে আহত হয়েছেন। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি। তারাই জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। সেই সাথে হিংস্র শিয়ালগুলোকে পকড়াও করার জন্য আমাদের লোকজনও তাদের সাথে একত্রে কাজ করছে।