সাতক্ষীরার তালায় সরিষা আবাদে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতাকে মোকাবেলা করে অনেক কৃষক কৃষাণী এগিয়ে এসেছেন এবার তাদের পতিত জমিতে সরিষা আবাদে। ঘরে বসে না থেকে গোয়ালে গরু পালন আর মাঠ ভরা নিজের চাষ করা শস্যের ঝলমলে ফুলের বাহার দেখে অনেকের মুখে এখন মিষ্টি হাসি। প্রথমবার অনেকেই সরিষা চাষ করে লাভবান হবেন বলে ধারনা করছেন।
সরেজমিনে তালার উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন ঘুরে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বিলে হলুদ রঙের সমাহার। দক্ষিণের বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল গুলো। ভন ভন করে আওয়াজ তুলছে মৌমাছির দল। এরই মধ্যে বেড়ে উঠে দানা বাধতে শুরু করেছে সরিষা গাছ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বিলের পর বিল।
খলিনগর ইউনিয়নের আফেলা খাতুন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের এলাকার জমিতে শুধু আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়। এছাড়া বাকী সময়টাতেই পড়ে থাকে জমিগুলো। এই প্রথমবারের মতো তিনি সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে বিনাচাষে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। তার ক্ষেত ভরে উঠেছে সরিষা ফুলে। ইতোমধ্যে গাছগুলোতে সরিষার দানা বাধতে শুরু করেছে। তিনি আশা করছেন প্রতিবিঘা জমিতে ৩ মণের অধিকার সরিষা পাবেন।
তিনি বলেন, সরিষা আবাদে খরচ নেই বললেই চলে। তাই প্রায় তিনগুণ লাভ হতে পারে।
একইভাবে এবছর প্রথমবারের মতো সরিষা আবাদ করেছেন আমেনা বেগম ও। তিনি বলেন, আমন ধান ওঠার পর আমাদের জমিগুলো পতিত অবস্থায় বছরের আট মাসই পড়ে থাকে। এবছর বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কর্মীরা এসে আমাদের সরিষা আবাদের জন্য বলেন। তারা বলেন কোন খরচ যেহেতু হবে না, আপনার একটু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি সফল হন, তাহলে তো অন্তত পরিবারের তেলের খরচটা উঠে যাবে। এরপর তারা বীজ ও জৈব সারও দেন। তখন আমরা বীজ ছড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং আবাদ করি। যদিও জলাবদ্ধতার কারণে একটু দেরি হয়েছে। তারপরও আশা করছি ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, আমন মৌসুমের পর তালা ও আশাশুনির হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার কারণে পতিত থাকে। এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য উন্নয়ন প্রচেষ্টা পিকেএসএফ এর সহায়তায় আরএমপিটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুইশজন চাষীকে বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়তা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে এসব চাষী তাদের ফেলে রাখা জমিতে বিনাচাষে সরিষার আবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলার সরিষার আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫ শত ৩১ হেক্টর। সরিষা চাষে কৃষকদের এ বছর ৫০০০ জনকে সরিষা বীজ এবং সার প্রণোদনা দেওয়াতে বিগত বছরের চেয়ে এবারে অনেক বেশী জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। কৃষকদের মাঝে সরকারিভাবে সরিষা বীজ প্রদানসহ তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। এ বছর কৃষকরা বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।