সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ১০০টি ইকনোমিক জোন করার কথা ছিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের (বেজা)। তবে আপাতত সরকারি মাত্র ৫টি ইকনোমিক জোনের কাজ আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের(বেজা) কার্যালয়ে বেজার অগ্রগতি সম্পর্কে মিট দ্যা প্রেসে এসব জানান তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করেছি, যেখানে প্রাথমিকভাবে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল) অবকাঠামো ও ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করতে টাইম বাউন্ড (Time bound) পরিকল্পনা করেছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী ২ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১৩৩টি শিল্প নির্মাণের পথ সুযোগ সৃষ্টি হবে যেখানে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশা করছি।
পাশাপাশি আমরা আরও ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, চাইনিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চাদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল) আন্ডার অ্যসিসমেন্ট (Under Assessment) এ রেখেছি যা বিভিন্ন সমীক্ষা শেষে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, আমারা বেজাকে একটি প্রকৃত বিনিয়োগবান্ধব সংস্থায় রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে বাস্তবসম্মত কমিটমেন্ট করছি যাতে করে বিনিয়োগকারীগণ সময় অনুযায়ী তার বিনিয়োগ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। এছাড়া যে সকল বিনিয়োগকারী জমি নিয়েছে কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি, তাদেরকে শিল্প নির্মাণে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে এবং তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা বেজাকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। যদি এসকল বিনিয়োগকারীগণ আমাদের পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে উন্নয়ন কাজ শুরু করতে অপারগ হয়, তাহলে তাদেরকে জমি বেজার নিকট ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা সফলতা পেতে শুরু করেছি।
তিনি বলেন, বেজা যদি আগামী ২ বছরে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে আরও ভালো উদ্যোগ গ্রহণে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে সরকারের সকল বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ। বেজার মালিকানাধীন অব্যবহৃত জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছি। এছাড়া জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল শ্রমিকদের আবাসিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ফেনী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দেশে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে আগামী ১০ বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্দেশ্য সফল হবে। বিশেষ করে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ জাপানিজ ও জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন হলে আগামীতে আরও অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পথ সুগম হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও সরকারি এই পাঁচটি ইকনোমিক জোনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দিতে পারিনি। তবে আমরা পরিকল্পনা করেছি, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে এই পাঁচটি ইকনোমিক জোনে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এছাড়া বেসরকারি ইকনোমিক জোনের জন্য রোডম্যাপ করা হবে। এই রোডম্যাপ অনুযায়ীই বেসরকারি ইকনোমিক জোনগুলোতে যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ কর হবে বলে জানান তিনি।
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আরও বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা আছে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় না। আমি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই পাঁচটি ইকনোমিক জোনে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু আমাদেরও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাও আছে। বর্তমানে বেজার ওয়েবসাইট থেকে ৬০টি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু আছে এবং আরও সার্ভিস চালুর অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, আর আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে আরো ১৩৩টি বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে সাড়ে ৫শ' কোটি ডলার বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। একশটি ইজেড বন্ধ বা বাতিল করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা অগ্রাধিকার নির্ধারন করে কাজ করছি। এ পর্যন্ত সাত হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮৩টি বিনিয়োগকারী ছাড়া বাহিরের সবচে বেশি চীনের ১১টি। এরপর জাপান ৬টি ও যুক্তরাজ্যের ৪টি রয়েছে। এছাড়াও ৯টি দেশের বিনিয়োগকারী রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নীতিমালার দফায় দফায় পরিবর্তন, সরকারি সেবার মান কম, মিরসরাই জোনে পানির সমস্যা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীন রয়েছে। মিরসরাইতে শ্রমিক সংকট রয়েছে। কারন সেখানে আবাসনের সমস্যা।