সিইসি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. জকরিয়া
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে গঠিত সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটিতে তিনশ’র বেশি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে এই নামগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছে সাবেক আমলা, বিচারপতি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়ার নাম।
ক্ষমতা পট পরিবর্তনে এবারের নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাবে বেশি সতর্ক ছিলো রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করেছে ইসি।
জানা গেছে, নতুন ইসি গঠনে বিএনপি থেকে ১০ জন, জামায়াতে ইসলামী থেকে আট জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পছন্দমতো নাম প্রস্তাব করেছে।
তালিকার নাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রস্তাব করা নামগুলোর মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড.মোহাম্মদ জকরিয়ার নাম। এরপরে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, এ এম এম নাসির উদ্দিন, সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান ও মহিবুল হক।
প্রস্তাবিত নামের তালিকায় নির্বাচন নিয়ে পূর্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে ড. মোহাম্মদ জকরিয়ার। সাবেক এই আমলা প্রশাসনে সুনামের সাথে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ড মোহাম্মদ জকরিয়া নির্বাচন কমিশনে সিনিয়র সহকারি সচিব হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে দক্ষতার সাথে সিনিয়র সহকারি সচিব হতে উপসচিব, যুগ্ম সচিব পরে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ওয়ান ইলিভেন সরকারের রোষানলের শিকার হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাকে ওএসডি করে রাখা হয়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনে যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের মধ্য একজন কমিশনে থাকলে যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। তাদের মতে, সংসদ নির্বাচনের মতো বড় নির্বাচনে তাৎক্ষণিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যারা পূর্বে নির্বাচন কমিশনে কাজ করেছেন এমন কেউ দায়িত্ব পেলে কাজটা সহজ হয়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সার্চ কমিটিতে ৩০০ থেকে ৮শ’র বেশি নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে শুনেছি। সেখান যাচাই-বাছাই করে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের বিতর্কিত তিন নির্বাচনের পরে আসন্ন নির্বাচন আয়োজনের নতুন কমিশনের কেমন চ্যালেঞ্জ থাকবে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন কমিশনে কারা আসছে আগে সেটা দেখতে হবে। তাদের আগের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করেই কি ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে- সেটা ঝোঝা যাবে।
এই সাবেক কমিশনারের মতে, কারা আসবে-কারা আসলে কি হবে সেটা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে। কিন্তু আমি মনে করি, যারা আসবে তাদের সক্ষমতা ও সময়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ভর করবে। নতুন যারা আসবে তাদের আন্তরিকতা ও সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে-কেমন নির্বাচন হবে। আমার বিশ্বাস, ভালো একটি কমিশন গঠন হবে। যার মাধ্যমে রাজনীতিতে নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক- সেটার অবসান হবে।
সার্চ কমিটি সূত্র জানা যায়, বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই নাম জমা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আইন অনুযায়ী ২১ নভেম্বরের মধ্যে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করে। এরপর গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।