ভোলায় বাড়ছে মহিষ পালন, দুধ-দই বিক্রি করে জনগণের স্বস্তি
ভোলার অর্ধশতাধিক চরের মানুষের বর্তমান সময়ে জীবন-জীবিকার অন্যতম এক পন্থা মহিষ পালন। পূর্বে বিস্তীর্ণ চরের মাঝে যেখানে বাতানে বাতানে মহিষ পালন করা হলেও বর্তমান সময়ে মানুষ ঘরে ঘরে মহিষ লালন-পালন শুরু করেছে।
নদীর মাঝখানে এসব চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসের সমারোহ। আর এসব চরে পালন করা হয় হাজার-হাজার মহিষ। মহিষের মাংস, দুধ ও দই বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন মহিষ পালনকারীরা।
সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র জানা যায়, জেলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বিচ্ছিন্ন চর রয়েছে। এসকল চরে সরকারি হিসেবে ২ লক্ষ ৬০ হাজার মহিষের হিসেব থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি।
এখানে ৯৭টি মহিষের বড় বাতানসহ প্রায় ৭০০ দুধের খামার রয়েছে। সবগুলো খামার থেকে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লিটার দুধ হয়। এসব দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় দই। মহিষের দুধের এই দই দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই।
মহিষ পালনকারী ভোলার চরের মিন্টু খাঁ বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০১ সালে ৪টি মহিষ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। এখন তার ৪১টি মহিষ। এর পাশাপাশি তার ২ একর জমিও রয়েছে, যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা।
ভোলার চর বৈরাগিয়ার মহিষের বাতান মালিক জাকির হাওলাদার বলেন, তার ৯৫টি মহিষ রয়েছে। এই মহিষগুলো তারা দাদা পালন করা শুরু করেছৈ। এরপর চাচার হাত হয়ে এখন সে নিজে লালন-পালন করছে।
তিনি আরও জানান, আগে মহিষ একটু সামান্য রোগেই মরে যেত। তাই অনেকে বেশি পালন করতে চাইতো না। কিন্তু এখন কৃমিনাশক ঔষুধ ও বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে মহিষ মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমেছে। অন্যদিকে মাংস ও দুধের দাম বাড়ার কারণে লাভের পরিমানও বেড়েছে। তাই অনেকের মতো তারও বেশি মহিষ পালনের আগ্রহ বেড়েছে।
মহিষের আরেকটি বাতানের মালিক মো: ইউনুছ মিয়া বলেন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে তাদের বাতানে প্রায় আড়াই শত মহিষ রয়েছে। যা তারা চার পুরুষ ধরে লালন করে আসছেন। দৈনিক এখান থেকে ১৩০ থেকে ১৫০ কেজি দুধ হয়। জেলায় অনেকেই ঐতিহ্য ধারণ করে মহিষ পালন করে আসছেন। যা তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
স্থানীয় দধি বিক্রেতারা বলেন, সাধারণত দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের দইয়ের (টালির) চাহিদা বেশি। বর্তমানে দেড় কেজি ওজনের দধি ২৫০ টাকা ও ২ কেজি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দই থেকে মাখন, ঘি ও ঘোল বানানো হয়। মাখনের কেজি ৯০০ টাকা ও ঘিয়ের কেজি ১৬০০টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর ভালো দাম পাওয়ায় তাদের লাভও ভালো হয়। তবে দুধের দাম বৃদ্ধি পেলে দইর দামও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
এ বিষয় ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ভোলায় সরকারী হিসেবে জেলায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মহিষ রয়েছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লিটার দুধ আসে। এগুলো জলা মহিষ নামে পরিচিত। মাংস ও দুধ উৎপাদনের জন্য তারা এসব মহিষ পালন করে থাকে।
রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা ভোলা জেলায় ১শ’ একর জমির উপর ডিএলআরই ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রাণালয়ের যৌথ উদ্যোগে উন্নত মুদ্রাজাতের মহিষ উৎপাদনের খামার করার কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি ভোলার মহিষের বাতান মালিকরা খুব শীঘ্রই এর সুফল পাবেন। সব মিলিয়ে দ্বীপ ভোলার জনপদে আধুনিক প্রযুক্তিতে মহিষ পালন ও এর ব্যাপক প্রজনন সক্ষমতা দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।