বিস্ফোরণে ইউসুফের মাথার খুলি উড়ে যায় ২০ গজ দূরে

  • মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিস্ফোরণে ইউসুফের খুলি উড়ে যায় ২০ গজ দূরে

বিস্ফোরণে ইউসুফের খুলি উড়ে যায় ২০ গজ দূরে

রাত তখন প্রায় দেড়টা। লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীন লাইফ ফিলিং স্টেশনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ইউসুফ হোসেন নিজের গাড়িতে গ্যাস লোড নেয়ার জন্য আসেন। সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি লাইনে অপেক্ষমান রেখে নিজে গ্যাসের ভাউচারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার গাড়িটির আগে লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে চলাচলকারী মেঘনা পরিবহনের একটি বাসে গ্যাস লোড দেয়া হচ্ছে।

এরপরেই তার অটোরিকশায় গ্যাস লোড হবে। কিন্তু বিধি বাম। বাসটিতে গ্যাস লোড দেয়ার সময় হঠাৎই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় বাসের সিলিন্ডার। মুহূর্তেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইউসুফের মাথার খুলি উড়ে যায় ২০ গজ দূরে। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত ইউসুফ নিথর দেহে পড়ে থাকেন। বিস্ফোরণে খুলির পাশাপাশি তার মাথার মগজও ছিটকে গিয়ে আটকে থাকে ফিলিং স্টেশনের ফ্লোর ও বাউন্ডারি দেয়ালে।

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনায় ইউসুফসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। এরা সবাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও স্টেশন কর্মী।

ঘটনার পর খবর পেয়ে রাতেই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে গ্রীন লাইফ ফিলিং স্টেশনে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,  চারপাশে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পড়ে আছে।

বাউন্ডারি দেয়ালে মাথার মগজ লেগে আছে। ঘটনাস্থলের ২০ গজ দূরে ফিলিং স্টেশনের বাউন্ডারির ভেতরে এক জায়গায় ছোট কয়েক টুকরা খুলির কনা পড়ে আছে। কোনো এক দুর্ভাগার হাতের কুনুইয়ের একটি রক্তমাখা বাটিও দেখা গেছে। স্থানীয় উৎসুক জনতা একনজর দেখার জন্য ভিড় জমিয়ে রেখেছে ফিলিং স্টেশনে।

ওই ফিলিং স্টেশনের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মো. শিমুল হোসেন বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ইউসুফকে আগে থেকেই চিনতাম। তার বাড়ি বাঞ্চানগর এলাকায়। তিনি প্রতিদিন এখানে গ্যাস ভরতে আসতেন। ঘটনার সময়ও তিনি এসেছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা গাড়িতে গ্যাস ভরতে। কিন্তু মুহূর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেল। বিস্ফোরণের সাথে সাথেই তার খুলি উড়ে গিয়ে ২০ গজ দূরে পড়ল। ঘটনার সময় আমি একটু দূরে ছিলাম। দৌড়ে এসে দেখি ইউসুফ মস্তকবিহীন পড়ে আছে। দেখে মনে খুব ভয় এসে গেল। লোকটা ভাল ছিল খুব। আমরা তাকে জুম্মন মিয়া বলে ডাকতাম।

সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন বলেন, ঘটনার পরই আমরা ছুটে আসি। সে এক অবর্ণনীয় বিভৎস দৃশ্য। কারও মগজ পড়ে আছে, কারও হাত-পায়ের অংশ পড়ে আছে। রাতেই পুলিশ নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই সাথে এদিক সেদিক পড়ে থাকা দেহের খণ্ডাংশগুলো তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

বিস্ফোরণের এমন ভয়াবহ ঘটনা তিনি এর আগে কখনো দেখেননি বলে জানান।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রঞ্জিত কুমার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি নিম্নমানের ছিল। এতে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডারটির বিস্ফোরণ ঘটে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জয়নাল আবেদিন বলেন, তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। আহত আছেন ২০ জনের মতে। এরমধ্যে ১০ জনেরই কারো হাত, কারো পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে দগ্ধ হয়েছে। আমরা অধিকাংশ রোগীকেই ঢাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।