শিশুদের আত্মার খোরাকে সাহিত্য, শিল্পকর্ম ও সংগীত!

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গল্পের বইয়ের কল্পিত রাজ্যে শিশুরা খুঁজে পাবে অনাবিল আনন্দ, ছবি: সংগৃহীত

গল্পের বইয়ের কল্পিত রাজ্যে শিশুরা খুঁজে পাবে অনাবিল আনন্দ, ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে।

পাঠ্যবইয়ের ভিড়ে, পড়ালেখার চাপে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয় হয় একদম ছেলেবেলা থেকেই। স্কুল, কোচিং, হোম টিউটর, হোমওয়ার্ক, পড়ালেখার ব্যস্ততার ভিড়ে নিজের জন্য শিশুদের আলাদা সময় কই!

এভাবেই বেড়ে উঠছে এখনকার সময়ের বেশিরভাগ শিশুরা। গল্প ও কবিতার বই পড়া, গান শোনা, সাহিত্য সম্পর্কে জানা, চিত্রকর্মের সাথে পরিচিত হওয়ার সময় নেই একদম। সময় স্বল্পতা ও সন্তানদের পড়ালেখার বাড়তি চাপের দরুন অভিভাবকেরাও যেন নিরুপায়। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের সাথে তাদের পরিচিতি ঘটানোর বিষয়গুলোতে হয়তো তারাও তাই গুরুত্ব দিতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

অথচ একটি শিশুর পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে বিশুদ্ধ বাতাস, স্বাস্থ্যকর খাবার ও খেলাধুলা যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততখানি প্রয়োজন গল্প ও কবিতার বই, গান, সাহিত্য ও শিল্পকর্ম। এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে অস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ইংলিশ উপন্যাসিক স্যার ফিলিপ পালম্যান জানিয়েছেন, শিশুদের বিকাশের জন্য এই বিষয়গুলোও সমানভাবেই প্রভাব রাখে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/24/1561357170717.jpg

খুব সহজ ও চমৎকার উদাহরণের সাহায্যে তিনি এই বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। পালম্যান বলছেন, ‘আপনি যদি আপনার সন্তানকে খাবার ঠিকমতো না দেন, তবে তার প্রভাব খুব দ্রুত দেখা দেবে। যা হবে দৃশ্যমান। এদিকে আপনি যদি তাকে বিশুদ্ধ বাতাস ও উন্মুক্ত স্থানে খেলতে না দেন, তার ক্ষতিটাও হবে দৃশ্যমান। তবে সেটা চট করে ধরা যাবে না। ঠিক একইভাবে শিশুদের যদি ভালোবাসা ও স্নেহ না দেওয়া হয়, তার প্রভাব কয়েক বছরের মধ্যে দেখা না দিলেও, একটা সময়ে ঠিকই দেখা দেবে। যা একেবারে স্থায়ী।’

‘কিন্তু শিশুদের যদি সংগীত, সাহিত্য, শিল্পকর্মের সাথে পরিচিত না করানো হয়, তার ক্ষতিটা সহজে বোঝা যাবে না। কিন্তু খুব গভীরে সে ক্ষতিটা রয়ে যাবে। এই সকল বিষয়ের সাথে পরিচিত না হওয়া শিশুরাও সুস্থ শরীরে বেড়ে উঠবে, ঘুমাবে, দৌড়ঝাঁপ করবে, দুষ্টামি করবে আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই। কিন্তু খুব গভীরে সেই শিশুটির মাঝে কিছু একটার অভাব থেকেই যাবে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/24/1561357191115.jpg

এই কিছু একটার অভাব হলো নিজ সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কের অভাব, তার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠার অভাব, তাকে আপন করে নেওয়ার জন্য ভালোবাসার অভাব।

নিজ সংস্কৃতির চাইতে ভালোবাসার ও প্রিয় আর কিছু হতেই পারে না। সেই সংস্কৃতির সাথে ছেলেবেলা থেকে পরিচিতি না ঘটলে তার অভাবতি সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

বড় হওয়ার পর বা প্রাপ্তবয়স্ক হলে সংস্কৃতির নানান শাখার সাথে নিজ থেকে পরিচিতি ঘটবে। কিন্তু হুট করে এমন বিস্তৃত একটি বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া ও ছোট থেকে সেটা জেনে ও বুঝে বড় হওয়ার মাঝে তফাৎ থেকেই যায়।

সংগীত, সাহিত্য, শিল্পকর্ম শুধুই সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটায় না, আত্মাকেও শুদ্ধ করে, আত্মার খোরাক যোগায়।

প্রতিটি বাবা-মা চান তার সন্তানকে পরিপূর্ণভাবে বড় করে তুলতে, জ্ঞানে ও বিদ্যায়। সেক্ষেত্রে শুধু পাঠ্যবইয়ের মাঝে শিশুদের আবদ্ধ না রেখে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে বর্ণীল এই জগতের। যেখানে ভালোলাগা ও জ্ঞানের চর্চা থাকে সমান্তরালে।

আরও পড়ুন: শিশুদের জন্য খেলাধুলা কেন প্রয়োজন?

আরও পড়ুন: বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়াতে পারে সন্তানের ওজন