নিয়মিত চা পানের উপকারিতা

  • লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চা / ছবি: পিক্সাবে

চা / ছবি: পিক্সাবে

চা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের একটি। যেকোনো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় বললেও ভুল হবেনা। সমীক্ষায় জানা যায়, বিশ্বের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ মানুষ চা পান করে থাকেন। চা শুধু গায়ে উষ্ণ অনুভূতি জোগানো বা অবসরের সঙ্গী পানীয় নয়। চা পান করার রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পানির পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পান করা হয় চা। এই ভেষজ পানীয় সরাসরি ঔষধি না হলেও; শরীরের অনেক উপকার করার তথ্য পাওয়া যায়, যা অনেকেই জানেন না। অনেকের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও।

চা / ছবি: পিক্সাবে

ক্লান্তি দূর থেকে শুরু করে,আয়ু বৃদ্ধি করা- চা পানের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলেছে নানা ধরনের জরিপ ও গবেষণা। ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন অন্তত দুই কাপ চা পান মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। চা মূলত তৈরি করা হয় চাগাছ অর্থাৎ, ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম উদ্ভিদ থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সচরাচর ব্ল্যাক টি বা রং চা, গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের মতো বিভিন্ন ধরনের নাম শোনা গেলেও তা মূলত এই উদ্ভিদ থেকেই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে। চা যেভাবে শরীরের উপকারী প্রভাব ফেলে-

শরীরে সতেজতা

চায়ে আছে ক্যাফিন। ক্যাফিন শরীর সতেজ করে। কাজের শক্তি জোগায়। ফলে কাজ শুরুর আগে এক কাপ চা অনেকটাই কার্যকর হতে পারে। চায়ের মূলত ক্যাফেইনের কারণেই চায়ের মতো পানীয়ের দিকে বেশিরভাগ মানুষ ঝুঁকে থাকে। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে চায়ের জন্য ।স্থির হয়ে যায়। এমন অনেকেই আছেন যাদের এক কাপ চা না হলে চলেই না! এক কাপ পরিমাণ চায়ে থাকে প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন । এই চায়ে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরকে সহজে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলে। চা অনেকটা ইঞ্জিনের তেলের মতোই শরীর সতেজের রসদ হিসেবে কাজ করে।

মানসিক চাপ / ছবি: পিক্সাবে

মানসিক চাপ হ্রাস

চায়ের থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি কার্যকর। চা পানে স্নায়ুও আরাম পায়। কারণে- অকারণে আমরা প্রায় সময়ই স্ট্রেস বা মানসিক চাপে পড়ে যাই। মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরের ভেতরে অক্সাইডস নামের এক ধরনের উপাদান সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, চায়ের মধ্যে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে সৃষ্ট অক্সাইডসগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এতে মানসিক চাপ থেকে আমরা অনেকটা মুক্তি পাই।

চা পানে মানুষের স্নায়ুকে শান্ত করার বিষয়টি বেশ কিছু গবেষণাতেও পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, বৈরী পরিস্থিতিতে ভেষজ চা পানকারীদের তুলনায় নিয়মিত চা পানকারীরা তুলনামূলক বেশি শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এছাড়াও প্রতিদিন যারা অন্তত তিন কাপ চা পান করেন তাদের হতাশার ঝুঁকি চা পান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় শতকরা ৩৭ শতাংশ কম থাকে বলে গবেষকরা মনে করেন।।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

চা যে কেবল মানসিক চাপ কমায়, তা-ই নয়। বিভিন্ন গবেষণায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও চা পানের উপকারিতার দিকটি উঠে এসেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কয়েক কাপ চা পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। চায়ে উপস্থিত অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো বিপাকে সাহায্য করে, যা কি না শরীরের ইনসুলিনকে ঠিক রেখে  রক্তের গ্লুকোজকে দক্ষতার সঙ্গে সামলায়। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রং চা গ্রহণের পর শরীরের কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন বের হয়। আর ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হৃৎপিণ্ড / ছবি: পিক্সাবে

হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা

চা পানের আরেকটি অন্যতম উপকারিতা হলো হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা। যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে পাঁচ লাখ চা পানকারীদের নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি চা পান করার সঙ্গে মৃত্যুর ঝুঁকি কিছুটা কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, যারা চা পান করেন না তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন দুই কাপ বা তারচেয়ে বেশি চা পান করেন  এমন লোকদের মৃত্যুর ঝুঁকি নয় থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া চা পানের ফলে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিও কমে যায়। সেক্ষেত্রে চায়ের তাপমাত্রা, দুধ বা চিনি যুক্ত করার বিষয়ে সতেচন থাকতে হবে।