কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম 'ঈদের চাঁদে লেখা' উন্মোচন

  • মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম ঈদের চাঁদে লেখা উন্মোচন

কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম ঈদের চাঁদে লেখা উন্মোচন

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, ছায়ানট কলকাতার সভাপতি সোমঋতা মল্লিকের একক অ্যালবাম 'ঈদের চাঁদে লেখা' আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়েছে কলকাতায়।

রোববার (৭ মে) কলেজ স্ট্রিটের অভিযান বুক ক্যাফেতে বিহান মিউজিক থেকে প্রকাশিত সোমঋতা মল্লিকের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী গানের সংকলন 'ঈদের চাঁদে লেখা' উন্মোচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

অ্যালবামটিতে মোট ৬ টি গান আছে, যার সঙ্গীত আয়োজন করেছেন গৌতম সোম এবং রেকর্ডিং হয়েছে স্টুডিও 'ভাইব্রেশনস্'-এ। সকাল হ'ল শোন্ রে আজান, তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে, জরীন হরফে লেখা, হেরা হতে হেলে দুলে, ফুলে পুছিনু, 'বল, বল ওরে ফুল!' - এই ৬টি গান রয়েছে অ্যালবামটিতে। অ্যালবামের কয়েকটি গান বাংলাদেশের জনপ্রিয় মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম০'র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পেলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে নজরুলের ইসলামী গানে সম্বন্ধে আলোকপাত করেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মধুমিতা বসু।

প্রসঙ্গত, কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম ইসলামী গান সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেছেন কিংবদন্তি-শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহ্‌মদ তাঁর 'আমার শিল্পী জীবনের কথা' গ্রন্থে। তিনি জানান, “কাজিদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়, এই ধরণের বাংলায় ইসলামী গান দিলে হয়না? তারপর আপনি তো জানেন কিভাবে কাফের, কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাংক্তেয় করে রাখবার জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ। আপনি যদি ইসলামী গান লেখেন তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।”

কথাটা তাঁর মনে লাগল। তিনি বললেন, “আব্বাস, তুমি ভগবতী বাবুকে বলে তাঁর মত নাও, আমি ঠিক বলতে পারব না।” আমি ভগবতী ভট্টাচার্য্য অর্থাৎ গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল- ইন- চার্জ কে বললাম। তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন, “না না ওসব গান চলবেনা। ও হতে পারেনা।”

মনের দুঃখ মনেই চেপে গেলাম। এর প্রায় ৬ মাস পরে। একদিন দুপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি অফিস থেকে গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল ঘরে গিয়েছি। দেখি একটা ঘরে বৃদ্ধা আশ্চর্যময়ী আর বৃদ্ধ ভগবতী বাবু বেশ রসাল গল্প করছেন। আমি নমস্কার দিতেই বৃদ্ধ বললেন, “বসুন বসুন”। আমি বৃদ্ধের রসাপ্লুত মুখের দিকে চেয়ে ভাবলাম, এই-ই উত্তম সুযোগ। বললাম, “যদি কিছু মনে না করেন তা হলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামী গান দেবার কথা, আচ্ছা, একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কি?” তিনি হেসে বললেন, “নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা করা যাবে।”

শুনলাম পাশের ঘরে কাজিদা আছেন। আমি কাজিদাকে বললাম যে ভগবতী বাবু রাজি হয়েছেন। তখন সেখানে ইন্দুবালা কাজিদার কাছে গান শিখছিলেন। কাজিদা বলে উঠলেন, “ইন্দু তুমি বাড়ি যাও, আব্বাসের সাথে কাজ আছে।” ইন্দুবালা চলে গেলেন। এক ঠোংগা পান আর চা আনতে বললাম দশরথকে। তারপর দরজা বন্ধ করে আধঘন্টার ভিতরই লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’। তখুনি সুরসংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন। পরের দিন ঠিক এই সময়ে আসতে বললেন। পরের দিন লিখলেন, ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর’।

এভাবেই বাংলা সঙ্গীতে ইসলামী গানের প্রবর্তন করলেন কাজী নজরুল ইসলাম।